মঙ্গলবার । ডিসেম্বর ৯, ২০২৫
ডেস্ক রিপোর্ট বিজনেস ১২ জুলাই ২০২৫, ৭:৪১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় কিছু বিষয়ে একমত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র


কিছু বিষয়ে একমত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার তিনদিনব্যাপী আলোচনা শেষ হয়েছে। শুক্রবার (ওয়াশিংটন সময় সকাল ৯টা) তৃতীয় দিনের আলোচনার মধ্য দিয়ে এই পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়। যদিও শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তবুও বিভিন্ন ইস্যুতে দুপক্ষের মধ্যে আংশিক অগ্রগতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এক সরকারি কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও তিন দিনের বৈঠকে অধিকাংশ ইস্যুতে দুই পক্ষই সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে। আর এতে দুই পক্ষই কিছু ছাড় দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অন্য কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে বাংলাদেশকেও তা অনুসরণ করতে হবে এমন কিছু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক শর্তে একমত হতে পারেনি ঢাকা।

তিনি আরও জানান, এই আলোচনার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন চূড়ান্তভাবে পাল্টা শুল্ক নির্ধারণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আশ্বাসও মিলেছে। এ নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। সরাসরি অংশ নেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী।

বাণিজ্য উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়, দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, ভবিষ্যৎ কৌশল ও বিদ্যমান শুল্ক ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তিতর্ক হয়। বেশ কিছু বিষয়ে উভয় দেশ ঐক্যমত্যে পৌঁছায়। আলোচনার উল্লেখযোগ্য দিক ছিল শেখ বশিরউদ্দীনের একান্ত বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাম্বাসাডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে। সেখানে আন্তরিক পরিবেশে দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি সে দেশ থেকে আমদানিও বাড়াতে আগ্রহী এবং ইতোমধ্যে সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। শুল্কে ন্যায্যতা চায় বাংলাদেশ, যাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় থাকে। গ্রিয়ার এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকের ফলাফল গণমাধ্যমকে জানানো হবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, বাংলাদেশি পণ্যে চীনা কাঁচামালের ব্যবহার বেশি হওয়ায় ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে, কারণ দেশটি এখনও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় রয়েছে।

তবে আলোচনা সহজ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শিল্পখাতে চীনা মালিকানা, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা, শ্রম অধিকার এবং কঠোর ‘রুলস অব অরিজিন’ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে, যার আওতায় ৪০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজন ছাড়া পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে না। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন শর্ত ছিল, তারা কোনো তৃতীয় দেশের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করলে বাংলাদেশকেও তা মেনে নিতে হবে। এ ধরনের শর্তগুলো নিয়ে দ্বিমত থেকেই গেছে।

অন্যদিকে, ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, এই আলোচনা পর্যাপ্ত ফলপ্রসূ না হলে পরবর্তী দফায় আরও দক্ষ ও অভিজ্ঞ উপদেষ্টাদের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা। তাদের মতে, বাংলাদেশের শুল্ক হার যেন ভিয়েতনাম, ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে বেশি না হয়, সেদিকে কূটনৈতিকভাবে সচেতন থাকতে হবে।

এই বিষয়ে রাজধানীর রেলভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা বাণিজ্য, শিল্প ও রাজস্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে গতি আনতে জোর দেন এবং আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

নিউজ পাওয়া যায়নি