
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর এসপিদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। দুই দেশের চলমান উত্তেজনার মধ্যে সীমান্ত দিয়ে কোনো
সন্ত্রাসী-চোরাকারবারিসহ অন্য কেউ যাতে অনুপ্রবেশ করে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে না পারে, সে বিষয়েও পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত ঘিরে যাতে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব বা উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটায় সে বিষয়েও পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি শুরু করেছে।
দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা ও বরিশাল ছাড়া অন্য ৬টি বিভাগের ৩২টি জেলার সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে ৩০টি জেলার সীমান্ত রয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি তিনটি জেলার সীমান্ত থাকলেও রাঙামাটি জেলার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে দুটি দেশেরই।
গতকাল বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) আগেই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যেন এর পরিপ্রেক্ষিতে (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।’
সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনার পর সীমান্তবর্তী থানা পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় কেউ যাতে উসকানিতে পা না দেয়, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়ে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে নিজ নিজ দায়িত্বের বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। যার যার অবস্থান থেকে সবাই সতর্ক রয়েছে।
জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত সীমান্তে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ও চোরাচালানিসহ সব ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের জেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে কেউ উসকানি ছড়িয়ে স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রয়েছে।
যশোর জেলার পুলিশ সুপার রওনক জাহান বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত থানাগুলোর পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপি রেজাউল করিম বলেন, তার জেলায় চারটি থানা রয়েছে সীমান্ত এলাকায়। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনার পর প্রতিটি থানাকে যে কোনো ধরনের উত্তেজনা ঠেকাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজিবির আওতাধীন এলাকার বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলো চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি রয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানের সীমান্ত থাকলেও রাঙামাটির একটি অংশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তও রয়েছে।
সীমান্ত জেলা সিলেটের এসপি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানও জানিয়েছেন, তারা বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী সব থানার ওসিদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক আছি।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া এবং হালুয়াঘাট থানা এলাকা পড়েছে ভারত সীমান্তের সঙ্গে। ওই জেলার পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের কারণে কেউ যেন কোনো উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে, সেজন্য কড়া নজরদারি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আমরা নজর রাখছি, যেন কেউ বিদ্বেষমূলক কিছু ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে।
খবর: কা.বে.





















