ভরা মৌসুমেও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ইলিশের সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কম এবং দাম অনেক বেশি। এমন সংকটের মধ্যেও বিদেশে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার, যা নিয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সৌদি আরবে ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে এসব ইলিশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে পাঠানো হবে।
২০০১ সাল থেকে প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলা হলেও মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ তথ্য সঠিক নয়। বাস্তবে দিনদিন ইলিশের উৎপাদন কমায় সরবরাহ কমেছে।
মাছ ব্যাবসায়ীরা জানান, যেখানে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে না, সেখানে বাজারে ইলিশ আসবে কোথা থেকে? তাদের মতে, বিগত দিনে ইলিশের উৎপাদন ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছিল ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকায়, আর ৬০০–৭০০ গ্রামের ইলিশ ১৫০০–১৬০০ টাকায়। ভোক্তাদের অনেকে বলছেন, এখন ইলিশের দাম ওষুধের চেয়েও বেশি।
ব্যবসায়ী জয় চন্দ্র জানান, সামান্য সরবরাহ বাড়লেও দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তিনি বলেন, “নদীতে যখন ইলিশ নেই, তখন দাম বেঁধে দেওয়া কিংবা রপ্তানির সিদ্ধান্ত হাস্যকর।”
চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জের পদ্মা-মেঘনায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ মিলছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষিত পানি এসব অঞ্চলের নদীতে পৌঁছায়, যার ফলে মাছ কমে গেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৫.৭১ লাখ টন, তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৫.২৯ লাখ টনে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য উৎপাদনের পূর্বাভাস ৫.৩৮–৫.৪৫ লাখ টনের মধ্যে ধরা হলেও সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করছেন, গত বছরের মতো উৎপাদন হ্রাসের প্রবণতা চলতে থাকলে বাস্তবচিত্র আরও খারাপ হতে পারে।
চাঁদপুরের আড়তদাররা অভিযোগ করছেন, মৎস্য অধিদপ্তরের উৎপাদন সংক্রান্ত হিসাব অনুমানের ওপর নির্ভর করে তৈরি, যা মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।
সরকারের পক্ষ থেকে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসীদের চাহিদা বিবেচনায় পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “সরবরাহ কম, চাঁদাবাজি ও ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তবে বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে আশা করছি।” প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।





















