মঙ্গলবার । ডিসেম্বর ৯, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিজনেস ২৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

ট্রাম্পের শুল্কনীতি যেন বোয়িংয়ের জন্য আশীর্বাদ


বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে বাংলাদেশ বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক থেকে পরিত্রাণের কৌশল হিসেবে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমরা কী কী পণ্য কিনব, যেমন, এয়ারক্রাফট, তুলা, সয়াবিন, গম এসব বিষয় বাংলাদেশ থেকে দেওয়া ডকুমেন্টগুলোতে উল্লেখ করেছি। বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন ইন্দোনেশিয়ার বিষয়ে জানিয়েছে, তাদের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্কের বিষয় উল্লেখ করে চুক্তি হতে পারে। আমরাও প্রত্যাশা করছি, ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ থেকে ২০ শতাংশের মতো শুল্ক নির্ধারণ করা হতে পারে বা এর চেয়ে কমও হতে পারে। আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্যই অপেক্ষা করছি। এই কয় দিনের মধ্যে সে রকম প্রস্তাব আসতে পারে—এমন প্রত্যাশাও রয়েছে আমাদের।’ চলমান শুল্ক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ উচ্চমূল্যের পণ্য কেনার কৌশল নিচ্ছে। এই ‘স্ট্র্যাটেজিক ডিল’ শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের মন জয়ে বিমান ক্রয় একটি কার্যকর ‘ট্রাম্পকার্ড’ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো ‘বোয়িং কার্ড’ খেলে শুল্ক সমঝোতার পথে হাঁটছে বাংলাদেশও। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে মার্কিন বোয়িংয়ের নামও রয়েছে।

বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকি ছুড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও এ যুদ্ধে সাধারণত কেউ জেতে না। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে লাভের ক্ষীর খাচ্ছে বিমান কোম্পানি বোয়িং। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই শুল্কনীতি বোয়িংয়ের জন্য যেমন নতুন কার্যাদেশের পথ খুলে দিচ্ছে, তেমনি নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ট্রাম্পের প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি করছে, তাতে বোয়িংয়ের মতো মার্কিন কোম্পানির পণ্য কেনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ বছরের শুরু থেকেই কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া বোয়িংয়ের বিমান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। ট্রাম্প এটিকে নিজ সরকারের “শুল্ক দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল” হিসেবে তুলে ধরছেন।

তবে এই শুল্কনীতি এখন উল্টো ফলও দিতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি পাল্টা প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে, তাহলে বোয়িংয়ের অন্যতম বাজারগুলো ঝুঁকির মুখে পড়বে। বাজেট এয়ারলাইনস রায়ানএয়ার ইতিমধ্যে জানিয়েছে, তারা বোয়িংয়ের সরবরাহে দেরি করতে পারে যদি শুল্ক বেড়ে যায়।

বোয়িংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেল ৭৩৭ ম্যাক্স ও ৭৭৭-৯ এখনো এফএএ-এর অনুমোদন পায়নি, ফলে নতুন চুক্তি পেলেও বিমান সরবরাহে দেরি হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদন ঘাটতি, সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাঘাত, ধর্মঘট এবং অতীতের নিরাপত্তাজনিত দুর্ঘটনার প্রভাব এখনো কাটেনি।

বিশ্লেষক কোর্টনি মিলার বলেন, “ট্রাম্পের শুল্কনীতি যতই আক্রমণাত্মক হোক না কেন, দীর্ঘমেয়াদে সেটা মার্কিন কোম্পানির ওপরই বুমেরাং হতে পারে।” কারণ বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল বোয়িং ও এয়ারবাস-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং একটিকে চাপ দিলে অন্যটি সুবিধা নেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন প্রশ্ন একটাই—ট্রাম্পের শুল্ক-কেন্দ্রিক আগ্রাসী কৌশল বোয়িংকে সাময়িক চুক্তি এনে দিচ্ছে, না কি দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন বিমান শিল্পের জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়াবে?

নিউজ পাওয়া যায়নি