বুধবার । ডিসেম্বর ৩, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক স্বাস্থ্য ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৮:০৯ অপরাহ্ন
শেয়ার

আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণ

আইসিইউ রোগীর ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর


ICDDRB

আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা।

অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যবহারে দেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এর ফলে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রোগীদের ৪১ শতাংশের শরীরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করছে না।

সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এএমআর–কে “বিপজ্জনক পর্যায়ে” নিয়ে গেছে, যা দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্যঝুঁকি। জনস্বার্থে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদও দেন তিনি।

আইইডিসিআর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৪৭৭ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করেছে। দেশের পাঁচটি হাসপাতালের আইসিইউ রোগীদের শরীরে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।

ফলাফলঃ ৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা ৮০%–এর ওপরে, ১টির ৬০–৮০% এবং বাকি অধিকাংশের সংবেদনশীলতা ৬০%–এর নিচে।

এ সময়ে পরীক্ষাকৃত মোট নমুনার ৭ শতাংশে প্যান–ড্রাগ–রেজিস্ট্যান্স (পিডিআর) পাওয়া গেছে- অর্থাৎ এসব রোগীর ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়। আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার ৪১ শতাংশ।

আইইডিসিআরের তথ্যমতে, তারা ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় এএমআর সার্ভিলেন্স চালাচ্ছে। এ বছর বিশ্লেষিত ১২৩টি ড্রাগ–বাগ কম্বিনেশনের মধ্যে- ৩৮টিতে কার্যকারিতা বেড়েছে, ৭৯টিতে কমেছে এবং ৬টি অপরিবর্তিত।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আরও গুরুতর সংকট দেখা দেবে।

২০২৪–২৫ অর্থবছরের তথ্যমতে, সারা দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের ৫৭ শতাংশই ঢাকায় ব্যবহৃত হয়েছে।এরপর রয়েছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট। ইউটিআই রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক- সেফট্রিয়াক্সোন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্সাসিলিন, পাইপেরাসিলিন-টাজোব্যাকটাম ও ভ্যানকোমাইসিন।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত- অযথা ব্যবহারের কারণে এসব অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত কার্যকারিতা হারাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এখনই জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নীতিমালা বাস্তবায়ন না করলে ও ফার্মেসি থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয়–ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করলে আগামী এক দশকেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা “গুরুতর ঝুঁকিতে” পড়বে।

তাঁরা বলেন, “অ্যান্টিবায়োটিক যত কম ব্যবহার করবেন, তত বেশি কার্যকর থাকবে।”

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি পাওয়া গেছে। টেট্রাসাইক্লিনের কার্যকারিতা ১০০ শতাংশ এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন ৯৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর। কারণ- সেখানে মানুষ তুলনামূলকভাবে চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে ওষুধ সেবন করেন।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা জনসাধারণকে সতর্ক করে বলেছেন- অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার না হলে চলমান সংকট দ্রুত মহামারির আকার নিতে পারে।