মঙ্গলবার । ডিসেম্বর ৯, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫১ অপরাহ্ন
শেয়ার

এক্সপ্লেইনার

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল চার পশ্চিমা দেশ, কোণঠাসা ক্ষুব্ধ ইসরায়েল


Palestine Israel

ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে দীর্ঘদিনের হতাশা থেকে এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ঘোষণায় এ দেশগুলো জানায়, তারা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করছে। এর মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র চার দেশ বিশ্বের আরও ১৪৭টি দেশের সঙ্গে একাত্ম হলো।

বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আধুনিক ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, “আজ আমরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের শান্তির আশা পুনরুজ্জীবিত করতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছি। গাজায় মানুষের সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ, অনাহার ও ধ্বংসযজ্ঞ সহ্য করা যায় না।”

ইউরোপের দুই দেশ ফ্রান্স এবং মাল্টাসহ আরও কয়েকটি দেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনে একই ধরনের ঘোষণা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে “সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করার শামিল” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “৭ অক্টোবর হামাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করছে। জর্ডান নদীর পশ্চিমে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে উঠতে দেওয়া হবে না।”

২০২৩ সালের হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলের তথ্যমতে ১,২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। পাল্টা অভিযানে গাজায় ইতিমধ্যে ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধের ফলে দুর্ভিক্ষ, গৃহহীনতা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় সব মানুষ বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ফিলিস্তিনিরা এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মনে করেন ফিলিস্তিনিদের এই দুর্দশায় তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। হামাস বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও তারা এও বলেছে, যুদ্ধ বন্ধ ও পশ্চিম তীর দখল রোধে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, এই স্বীকৃতি ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা ও শান্তিতে ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র’ গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করবে।

ব্রিটেন, কানাডা ও পর্তুগালের শীর্ষ নেতারা পৃথকভাবে জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দেওয়া নয়, বরং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও স্থায়ী সমাধানের প্রয়াস।

তবে যুক্তরাষ্ট্র, যারা ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র তারা এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির জানিয়েছেন, তিনি পশ্চিম তীরের দখলকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব আরোপের প্রস্তাব দেবেন, যা কার্যত সংযুক্তির ইঙ্গিত বহন করে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সেনারা জেরুজালেম দখল করে এবং ১৯২২ সালে লিগ অব নেশনস ব্রিটেনকে ফিলিস্তিন শাসনের দায়িত্ব দেয়। তাই ব্রিটেনের এ সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।

ব্রিটেনে ফিলিস্তিনি মিশনের প্রধান হুসাম জোমলট বলেন, “আজকের দিনটি ইতিহাস সংশোধনের দিন। ব্রিটিশ সরকার দেখিয়ে দিল তারা অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করতে চায়।”

নিউজ পাওয়া যায়নি