
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার নায়ক থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা বিজয় বর্তমানে তীব্র সমালোচনার মুখে। কারণ, গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তার নবাগত দল তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজাগাম (টিভিকে)-এর এক নির্বাচনী সমাবেশে পদদলিত হয়ে অন্তত ৪ জন প্রাণ হারিয়েছে।
কী ঘটেছিল?
তামিলনাডু রাজ্যের কারুর জেলায় বিজয়ের জনসভায় যোগ দিতে লাখো মানুষ ভিড় জমান। বিজয় যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ জনতার চাপে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় এবং মুহূর্তেই মর্মান্তিক পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এত প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় দায় কার? তা নিয়ে এখন তীব্র রাজনৈতিক দোষারোপ চলছে। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, কী পরিমাণে জনসমাগম হতে পারে আয়োজকরা সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি।
বিজয় কে?
৫১ বছর বয়সী বিজয়, পূর্ণ নাম জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর। তিন দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে তিনি তামিল সিনেমার অন্যতম সফল তারকা। “ঘিলি”, “পোক্কিরি”, “থুপ্পাকি”, “কাত্তি”সহ বহু ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করেছেন।
ভক্তরা তাকে ‘ইলয়া থালাপতি’ বা ‘তরুণ সেনাপতি’ নামে ডাকেন। তার নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেই হলের বাইরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সমালোচকদের খারাপ রিভিউ সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার ছবিগুলো বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।
রাজনীতিতে কেন নামলেন বিজয়?
বিজয়ের রাজনীতিতে আসা নিয়ে অনেকদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। তার অনুগত সংগঠন ২০২১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ফলও করেছিল। অবশেষে গত বছর তিনি পূর্ণকালীন রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দেন এবং অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এটি অবশ্য নতুন কিছু নয়—তামিলনাডুর রাজনীতিতে এমজি রামাচন্দ্রন ও জয়ললিতার মতো তারকারা সিনেমা থেকে রাজনীতিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছেন। তবে কমল হাসান কিংবা রজনীকান্তের মতো অনেক তারকার রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রত্যাশিত ফল আনতে পারেনি।
সমালোচনা ও সংকট
রাজনীতিতে অভিষেকের পর থেকেই বিজয়ের সমাবেশগুলোতে বিপুল ভিড় হচ্ছে। যদিও তার প্রতিপক্ষরা বলছেন, বিজয়ের অভিজ্ঞতার অভাব আছে এবং তার বক্তব্যগুলো অস্পষ্ট।
কারুরের এই মৃত্যুর ঘটনায় বিজয়ের দলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দাবি উঠেছে। তবে তার বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে রাজ্য সরকার এখন সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন বলেছেন, দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজয়ের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বিজয় ব্যক্তিগতভাবে এখনো ভুক্তভোগীদের কাছে যাননি, যা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তবে তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ ঘটনা তাঁকে “ভেঙে দিয়েছে” এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই মর্মান্তিক ঘটনা বিজয়ের রাজনৈতিক যাত্রায় বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে কি না—এখন সেটিই আলোচনার বিষয়। তামিলনাডুতে তারকাখ্যাতি সব সময় ভোটে পরিণত হয় না। ফলে একদিকে তার বিপুল জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে এ দুর্ঘটনা—দুইয়ের টানাপোড়েনে বিজয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে।
বিবিসি অবলম্বনে























