সোমবার । ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৫ অপরাহ্ন
শেয়ার

জেন-জি বিক্ষোভের মুখে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট


Madagascar-president

তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ‘জেন জি’ বিক্ষোভের ঢেউ এবার আঘাত হেনেছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারে। তীব্র বিক্ষোভ ও সামরিক বিদ্রোহের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিরোধী দল ও সরকারি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে জেন জি বিক্ষোভের মুখে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সরকার পতনের ঘটনা।

মাদাগাস্কারের সংসদে বিরোধী দলের নেতা সিতেনি র‌্যান্ড্রিয়ানাসোলোনিয়িকো জানান, সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রোববার (১২ অক্টোবর) রাতে রাজোয়েলিনা দেশ ত্যাগ করেন। তাঁর বর্তমান অবস্থান অজানা হলেও একটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি একটি ফরাসি সামরিক বিমানে দেশ ছেড়েছেন। ফরাসি রেডিও এরএফআই জানিয়েছে, এই বিষয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছিল।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর পানি ও বিদ্যুৎ সংকটকে ঘিরে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তা দ্রুতই দুর্নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা ও মৌলিক পরিষেবার ঘাটতির বিরুদ্ধে গণবিপ্লবে রূপ নেয়। এর আগে নেপাল ও মরক্কোতেও তরুণদের নেতৃত্বে এমন বিক্ষোভ হয়েছে।

রাজোয়েলিনার পতনে বড় ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনীর অভিজাত ইউনিট ক্যাপস্যাট। ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে তাঁর ক্ষমতা দখলে সহায়তা করা এই ইউনিট এবার তার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে ক্যাপস্যাট শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দেয় এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করে।

এরপর রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেয় বিক্ষোভকারীদের পক্ষে থাকা আধাসামরিক বাহিনীর একটি অংশ। তারা জেন্ডারমেরি (সশস্ত্র পুলিশ) সদর দপ্তরও দখল করে নেয়। সোমবার রাজধানীর প্রধান চত্বরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে স্লোগান তোলে- “প্রেসিডেন্টকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে।”

Madagascar

১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভকারী আদ্রিয়ানারিভোনি ফ্যানোমেগ্যান্টসোয়া বলেন, “তিনি শুধু নিজেদের ধনী করেছেন, আর আমরা গরিব হয়েছি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেন জি প্রজন্ম।”

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জনগণের চাপে সিনেটের সভাপতিকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং জিন আন্দ্রে এনড্রেমাঞ্জারিকে অন্তর্বর্তীকালীন সিনেট প্রধান করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুপস্থিত থাকলে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সিনেট প্রধানই দেশ পরিচালনা করেন।

উল্লেখ্য, মাদাগাস্কারের জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে এবং অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকের বয়স ২০ বছরের কম- যারা মূলত এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।