মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার এখন সৌদি আরব। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী কর্মীদের মধ্যে ৭১ শতাংশই পাড়ি জমিয়েছেন দেশটিতে।তবে সম্প্রতি দেশটির দূতাবাস হঠাৎ করে কর্মীদের ভিসা অনুমোদনে পেশাগত দক্ষতার সনদ বাধ্যতামূলক করেছে। এতে ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং বেড়েছে অভিবাসন ব্যয়।
অভিবাসন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে গৃহকর্মী ছাড়া অন্যান্য সব শ্রেণির ভিসার জন্য পেশাগত দক্ষতার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ সনদের জন্য অনলাইনে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, যার ফি ৫০ মার্কিন ডলার। অনেক কর্মী একাধিকবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েও সনদ পাচ্ছেন না। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতাও বাড়ছে। এর ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যের এ শ্রমবাজার।
২০২৩ সালে সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ‘স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম’ চালু করে। শুরুতে পাঁচটি পেশায় এটি বাধ্যতামূলক ছিল, এখন ৩৩টি পেশায় সনদ ছাড়া ভিসা মিলছে না। ১৯ জুন থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে।
সনদ পেতে তাকামলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে নির্ধারিত ফি দিয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়। যদিও প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, ফি বহন করবে সৌদি পক্ষ, এখন তা কর্মীদেরই দিতে হচ্ছে।
বরিশাল টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. গোলাম কবির জানান, টিটিসি কেবল পরীক্ষার আয়োজন করে। ফল মূল্যায়ন ও সনদ প্রদান করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কেউ ফেল করলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানা গেছে, সৌদি আরবে শ্রমিকরা ক্রমাগত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক কর্মী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি পান না। অনেকে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এজেন্টদের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে চলে যান। দক্ষতার সনদ থাকলে কাজ পাওয়া যেমন সহজ হয়, তেমনি শ্রমিকদের বেতনও প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, গত তিন সপ্তাহে কোনো ভিসা হয়নি। ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে তাকামল সনদ ছাড়া সৌদি দূতাবাস কোনো ভিসা দিচ্ছে না। তারা জেনারেল লেবারদেরও সার্টিফিকেটের অধীনে নিয়ে এসেছে। তাদেরও কম্পিউটার টেস্ট দিতে হচ্ছে। ৫০ ডলার খরচ করে রেজিস্ট্রেশন করে একবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আবার ৫০ ডলার দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে সনদ নিতে হবে। আমি যাদের ফলাফল পাচ্ছি অনেককেই ফেল করাচ্ছে। একজন ক্লিনার, লেবারকে কম্পিউটারে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তারা এগুলোয় অভ্যস্ত না। সময় লাগবে। সরকার পদক্ষেপ না নিলে সৌদির শ্রমবাজারও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।’
জানা গেছে, ২০২৩ সালে সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে একটি দক্ষতা যাচাই কর্মসূচি (স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম) শুরু করে। এতে অংশ নিলেই মেলে পেশাগত দক্ষতার সনদ। এতদিন এ সনদ ছাড়াই ভিসা পেতেন কর্মীরা। কিন্তু গত ১৯ জুন থেকে এ সনদ ছাড়া কোনো ভিসার অনুমোদন দিচ্ছে না দূতাবাস। শুরুতে সৌদি সরকার পাঁচটি খাতে দক্ষতা পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করেছিল। বর্তমানে ৩৩টি খাতের জন্য কর্মীদের সনদের প্রয়োজন হবে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষতা যাচাই কর্মসূচি চালু করার আগে সৌদি সরকার অনুমোদিত সংস্থা ‘তাকামল’ এবং বিএমইটির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এর অংশ হিসেবে কর্মীদের নিবন্ধনের পর অনলাইন পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করে একটি সনদ অর্জন করতে হবে। এজন্য ৫০ ডলার নিবন্ধন ফি দিতে হবে। এ পরীক্ষায় একাধিকবার অংশগ্রহণ করা যাবে এবং প্রাপ্ত সনদ পাঁচ বছরের জন্য বৈধ থাকবে। তখন বলা হয়েছিল যে কর্মীদের পরীক্ষার নিবন্ধনের জন্য কোনো অর্থ দিতে হবে না। তাকামল ৫০ ডলার খরচ বহন করবে। তবে জানা গেছে, এ খরচ বর্তমানে সৌদি অভিবাসী কর্মীরা নিজেরাই বহন করছেন। ফি জমা দিয়ে অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এরপর নির্ধারিত সময়ে তাকামল অথরাইজড টেস্ট সেন্টার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) অনলাইনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দুই ভাগে পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়। তাত্ত্বিক পরীক্ষা অনলাইনে সম্পন্ন হয়। যেখানে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, শিল্প বিধি, মৌলিক কাজের দক্ষতা বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়। এছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষায় কারিগরি দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়।
বরিশাল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. গোলাম কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘টিটিসি শুধু পরীক্ষার কেন্দ্র। এখানে অনলাইনে নির্ধারিত থিওরি পরীক্ষা হয়। আর একটি অংশে ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। তবে সবকিছুর মূল্যায়ন করে সৌদি আরবের এজেন্ট তাকামল ওয়েবসাইটে সনদ দেয়। তারাই সবকিছুর মূল্যায়ন করে, এখানে কেউ অকৃতকার্য হলে বা সনদ না পেলে আমাদের কিছু করার নেই।’
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানা গেছে, সৌদি আরবে শ্রমিকরা ক্রমাগত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক কর্মী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি পান না। অনেকে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এজেন্টদের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে চলে যান। দক্ষতার সনদ থাকলে কাজ পাওয়া যেমন সহজ হয়, তেমনি শ্রমিকদের বেতনও প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি আরবের শ্রমবাজারটি চালু আছে। সবচেয়ে বেশি কর্মী যাচ্ছে সেখানে। গত তিন সপ্তাহে কোনো ভিসা হয়নি। ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে তাকামল সনদ ছাড়া সৌদি দূতাবাস কোনো ভিসা দিচ্ছে না। তারা জেনারেল লেবারদেরও সার্টিফিকেটের অধীনে নিয়ে এসেছে। তাদেরও কম্পিউটার টেস্ট দিতে হচ্ছে। ৫০ ডলার খরচ করে রেজিস্ট্রেশন করে একবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আবার ৫০ ডলার দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে সনদ নিতে হবে। আমি যাদের ফলাফল পাচ্ছি অনেককেই ফেল করাচ্ছে। একজন ক্লিনার, লেবারকে কম্পিউটারে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তারা এগুলোয় অভ্যস্ত না। সময় লাগবে। সরকার পদক্ষেপ না নিলে সৌদির শ্রমবাজারও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।’





























