শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭:৪৬ অপরাহ্ন
শেয়ার

ইতালিতে খুন হওয়া সাগরের বাড়িতে শোকের মাতম


sagor-bala

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করছেন মা রত্না বালা

‘আমরা দিন আনি দিন খাই। ওর বাপে কত কষ্ট কইরা পোলাডারে ইতালি পাঠাইছে। দুই বছর ধইরা সুখের মুখ দেখছিলাম। পোলায় মাস গেলে টাকা পাঠাইত। মাইয়াগো বিয়া দিছি। ভালো-মন্দ খাইতেও পারছি। এখন আমার সব শ্যাষ। একটাই পোলা আমার, ওরে ছাড়া কেমনে বাঁচব?’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রত্না বালা (৪৫)। তিনি ইতালিতে খুন হওয়া মাদারীপুরের তরুণ সাগর বালার মা।

রাজৈর উপজেলার পাখুল্লা গ্রামের কৃষক কুমোদ বালার একমাত্র ছেলে ছিলেন সাগর। তিনিই ছিলেন পরিবারটির ভরসা। বাবার ঘামঝরা পরিশ্রম, জমিজমা বিক্রি—সবকিছুর বিনিময়ে ছেলেকে ইতালি পাঠান কুমোদ বালা। স্বপ্ন ছিল, ছেলে সংসারটা বদলে দেবে, পরিবারের দুঃখ ঘুচিয়ে সুখ এনে দেবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ ভেঙে চুরমার।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইতালির একটি পার্ক থেকে সাগরের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। বুধবার রাতে সাগরের মৃত্যুর খবর স্বজনদের কাছে পৌঁছালে মুহূর্তেই শোকে পাথর হয়ে যায় গোটা পরিবার।

বৃহস্পতিবার সকালে সাগরের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মা রত্না বালা আর বড় বোন কাকলি বালা অঝোরে কাঁদছেন। প্রতিবেশীরা এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তাঁরা।

বোন কাকলি বালা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমার ভাই কইছিল, আমারে ফ্রিজ কিনে দিবে। সেদিন ফোনে বাবার কাছে টাকা আনতে যাওয়ার কথা কইয়া ফোন রাখল। আর আইজ ও না–ফেরার দেশে চইলা গেল। আমাগো সুখ বেশি দিন রইল না। সামনে দুর্গাপূজা, কিন্তু ঘরে শুধু কান্না আর শোক। আনন্দ শেষ হইয়া গেছে।’

কৃষক বাবা কুমোদ বালার কণ্ঠে হতাশা, ‘জমিজমা বিক্রি কইরা পোলারে পাঠাইছিলাম, এখন আমিই অন্যের জমিতে চাষ করি। এই কষ্ট কেমনে সহ্য করমু?’

সাগরের মামাতো ভাই শুভ বালা ও ভাতিজা মিঠুন তালুকদারই প্রথম পরিবারের কাছে তার মৃত্যুর খবরটি পৌঁছে দেন। তাদের মুখে খবর শোনার পর থেকেই সাগরের বাড়িতে শুরু হয় শোকের মাতম।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলছেন, সাগর ছিল ভদ্র-সাদাসিধে ছেলে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি গিয়েছিল পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। কিন্তু সেই স্বপ্নই কাল হলো তার জন্য।

রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, ‘ইতালিতে বাংলাদেশি তরুণকে হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করা হবে।’

মাত্র ২১ বছরের তরুণ সাগরের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে আছে পাখুল্লা গ্রাম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মায়ের বুকভাঙা কান্না, বোনের আহাজারি আর বাবার নিঃশ্বাসহীন দীর্ঘশ্বাসে আজ শোকের সাগরে ডুবে আছে পরিবারটি।