
নিহত সবুজ মাতুব্বর (বামে)।
স্বপ্ন ছিল পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো, পুরোনো দেনা শোধ করে নতুন ঘর তোলা। প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত অর্থে সচ্ছলতার নতুন অধ্যায় শুরু করার স্বপ্ন দেখেছিলেন মাদারীপুরের শিবচরের কাদিরপুর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের সবুজ মাতুব্বর (২৪)। কিন্তু সেই স্বপ্ন এক নিমিষে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দূর প্রবাস সৌদি আরবের মরুভূমিতে বালুর নিচে অর্ধগলিত লাশ হয়ে ফিরেছে সবুজের স্বপ্ন— তার জীবন।
সবুজের বাবা আব্দুল জলিল মাতুব্বর পেশায় ভ্যানচালক। জীবনের সব সঞ্চয়, এমনকি ঋণ করে একমাত্র ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন সৌদি আরবে, ভালো জীবনের আশায়। মাত্র আট মাস আগে রিয়াদ হয়ে আল কাসিম এলাকায় গিয়েছিলেন সবুজ। সেখানে কাজও জোটে, আর ঘরে ঘরে ফেরে হাসি। নিয়মিত টাকা পাঠিয়ে দেনা শোধ করছিলেন, সংসারে স্বস্তি ফিরছিল ধীরে ধীরে।
কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সবুজের সঙ্গে বাবা জলিল মাতুব্বরের শেষ কথা হয়। বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য টাকা পাঠানোর আশ্বাস দেন ছেলে। পরদিন আর ফোনে পাওয়া যায়নি তাকে। একদিন, দু’দিন করে কেটে যায়— কিন্তু ফোনের অপর প্রান্ত নিঃশব্দই থাকে। এরপর থেকেই শুরু হয় উদ্বেগ, আতঙ্ক আর অপেক্ষার দীর্ঘ দিন।
অবশেষে সোমবার (১৩ অক্টোবর) সৌদি আরবের আল কাসিম এলাকায় মরুভূমির বালুর নিচে এক অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পোশাক ও চেনা জিনিসপত্র দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেটি সবুজেরই। মঙ্গলবার রাতে খবর পৌঁছায় মানিকপুরের ছোট্ট গ্রামে। মুহূর্তেই নেমে আসে শোকের ছায়া, কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার ও স্বজনেরা।
সবুজের চাচা খোকন মাতুব্বর বলেন, “আমার ভাই কষ্ট করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিল, যাতে সংসারের মুখটা একটু হাসে। কিন্তু আজ সব শেষ। একমাত্র ছেলেটাকে হারিয়ে ভাইটা ভেঙে পড়েছে পুরোপুরি।”
সবুজের ছোট বোন রিয়ামনি আক্তারের কণ্ঠে শুধু আর্তনাদ— “ভাইয়ের কাছে ৩ লাখ টাকা ছিল আকামা করার জন্য। সেই টাকার জন্যই হয়তো ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার শুধু একটা অনুরোধ ভাইয়ের লাশটা যেন দেশে পাঠানো হয়, শেষবার মুখটা দেখতে চাই।”
নিহতের বাবা জলিল মাতুব্বর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “ছেলেটা বলেছিল ১০ হাজার টাকা পাঠাবে। সেই কথাটাই ছিল শেষ কথা। এখন আর কিছুই নেই— শুধু লাশ।”
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম ইবনে মিজান বলেন, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। পরিবারটিকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।”
সবুজের মতো হাজারো তরুণ প্রতিদিন পাড়ি জমাচ্ছে প্রবাস জীবনের কঠিন পথে। পরিবারে সুখ আনতে, মুখে হাসি ফোটাতে। কিন্তু কখনও কখনও সেই স্বপ্নই পরিণত হয় নিঃশব্দ শোকে।





























