শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

প্রবাসে স্বপ্নভঙ্গ: মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরলেন মুন্না


munna

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত প্রবাসী শ্রমিকরা—যাদের বলা হয় ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’। উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানো এই মানুষগুলোর অনেকেই প্রতারণা, বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক চাপে ভেঙে পড়েন। ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে ১৫১ জন প্রবাসী মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় দেশে ফিরেছেন। তাদেরই একজন সালেহ চৌধুরী মুন্না (২৮)।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে উন্নত জীবনের আশায় সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মুন্না। কিন্তু এক দশক পর তিনি দেশে ফিরলেন একেবারে ভিন্ন এক মানুষ হিসেবে—কোনো পাসপোর্ট বা কাগজপত্র নেই, শুধু একটি বোর্ডিং পাসে লেখা নিজের নাম। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সালেহ নিজের নাম, ঠিকানা, এমনকি পরিবারের সদস্যদেরও চিনতে পারছিলেন না। বিভ্রান্ত আচরণ ও লক্ষ্যহীন হাঁটাচলা বিমানবন্দরের সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে তাকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে পাঠানো হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে তার বড় ভাই শরীফ চৌধুরী অবশেষে তাকে শনাক্ত করেন। শরীফ জানান, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট মুন্না কিশোর বয়সে খারাপ সঙ্গের কারণে প্রবাসে পাঠানো হয়। সেখানে নানা প্রতিকূলতা, মাদকাসক্তি ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে তার মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে। গত দেড় বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার আল আমিন নয়ন বলেন, গত আট বছরে ১৫১ জন প্রবাসী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে দেশে ফিরেছেন। তবে এই সমস্যার মূল কারণ অনুসন্ধানে সরকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। তার মতে, এই পরিস্থিতির জন্য প্রতারণা ও শোষণ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, মাদকাসক্তি, কর্মক্ষেত্রের চাপ এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর নিষ্ক্রিয়তাই প্রধানত দায়ী।

ব্র্যাকের তথ্যমতে, এই শ্রমিকদের জন্য সরকারিভাবে কোনো পুনর্বাসন ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোই তাদের প্রাথমিক সহায়তা দিচ্ছে। সালেহ চৌধুরীর ক্ষেত্রেও ব্র্যাকের সহযোগিতায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

সালেহ চৌধুরী মুন্না কেবল একজন মানুষ নন, তিনি হাজারো প্রবাসীর প্রতিচ্ছবি—যারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, অথচ নিজের মানসিক যুদ্ধে হারিয়ে যাচ্ছেন। ১৭ বছরের কিশোর মুন্না নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সৌদি আরবে; আজ এক দশক পর ফিরে যাচ্ছেন নিজের ঘরে, যেখানে আপনজনরাও এখন তার কাছে অচেনা।