বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেলেন ১৪৭ জন। গতকাল রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে ২০১২ সালে দেশের বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিআইপি কার্ড বিতরণ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে ২০১২ সালের সিআইপি মনোনীত হওয়া ১০১ জন ব্যবসায়ীর হাতে কার্ড তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এছাড়া সংগঠনের হয়ে বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য আরো ৪৬ ব্যবসায়ী সিআইপি কার্ড পেয়েছেন। আগামীতে ক্যাটাগরি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আগের মেয়াদে রফতানি আয় ১৫ বিলিয়নে থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছিল। এবারো যদি রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে আর সরকার সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে, তাহলে এ আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
মন্ত্রী বলেন, আগামীতে নতুন ক্যাটাগরিতে আয়কর প্রদানকারীদেরও যুক্ত করা হবে; যাতে ব্যবসায়ীরা উত্সাহিত হন। ২০১২ সালের কার্ড ২০১৪ সালে বিতরণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এবার সিআইপি কার্ড বিতরণের বিষয়টি দেরি হয়ে গেছে। তবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ২০১৩ ও ’১৪ সালের কার্ড বিতরণ করা হবে।
জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী সিআইপি কার্ডপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য পাস ও গাড়ির স্টিকার পাবেন। পাশাপাশি জাতীয় অনুষ্ঠান ও মিউনিসিপ্যালিটির নাগরিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ প্রাপ্তি, রেল, সড়ক ও জলপথে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার, লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন ইস্যুর ক্ষমতা, পরিবারের সদস্যদের সরকারি হাসপাতালে কেবিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার— এ জাতীয় সুবিধাও ভোগ করবেন। এছাড়া বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ-২ ব্যবহারের সুযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা পাবেন এসব ব্যক্তি।
তবে কার্ড পাওয়া সত্ত্বেও সরকার ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ করেন অনেক ব্যবসায়ী। ঘোষণা দেয়ার পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই সিআইপিদের প্রাপ্য সুবিধা প্রদানে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন তারা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিআইপির স্বীকৃতি ব্যবসায়ীদের জন্য উত্সাহব্যঞ্জক। তবে শুধু নামমাত্র এ স্বীকৃতি না দিয়ে কার্ডধারীদের প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
সিআইপি কার্ড পেয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের অনেক নারী উদ্যোক্তা আছেন, যারা বিভিন্ন পণ্য রফতানি করেন। এ স্বীকৃতি পেলে তারা ব্যবসায় আরো উত্সাহ পাবেন। তিনিও সিআইপি কার্ডধারীরা প্রাপ্য সুবিধা পান না বলে অভিযোগ করেন।
যারা এ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন— নাজমুল হাসান এমপি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি.; তপন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লি.; সুজিত কুমার ভট্টাচার্য, স্বত্বাধিকারী, মেসার্স উত্তরা জুট ট্রেডার্স; ড. অশোক কুমার দাস, স্বত্বাধিকারী, মেসার্স এ কে জুট ট্রেডিং কোং; মো. সেলিম রেজা, স্বত্বাধিকারী, মেসার্স রেজা জুট ট্রেডিং; আকুনজী মোহাম্মাদ হারুনার রশিদ, স্বত্বাধিকারী, মেসার্স আকুনজী ব্রাদার্স; দুর্গা রানী দাস, স্বত্বাধিকারী, মেসার্স জুট গার্ডেন; নাজমুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জনতা জুট মিলস লিমিটেড; মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রমুখ।
ব্যবসায়ীরা যে খাতগুলোর হয়ে সিআইপি কার্ড পেয়েছেন, সেসব খাতের মধ্যে আছে কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য, ক্রাশড ফিনিশড চামড়া, চামড়াজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, তৈরি পোশাক, কৃষিজাত দ্রব্য, এগ্রো-প্রসেসিং, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রডাক্টস, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, বিশেষায়িত টেক্সটাইল, সিরামিক টেবিলওয়্যার, প্লাস্টিকজাত পণ্য ও কম্পিউটার। এছাড়া এফবিসিআই ও বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবেও সিআইপি কার্ড পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খবর বণিকবার্তা।


























