শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক রাজধানী ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

ভূমিকম্পে ঢাকার কোন এলাকা নিরাপদ, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?


dhaka-earthquake

ছবি: সংগৃহীত

রাজউকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ এক চিত্র— টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে, প্রাণহানি হতে পারে দুই লাখের বেশি। এতে রাজধানীবাসীর মনে প্রশ্ন—ঢাকায় কি আদৌ কোনো নিরাপদ এলাকা আছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তা নির্ভর করছে দুই বিষয়ের ওপর—ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং অবকাঠামোর মান।

ঢাকা ও আশপাশের মাটি মূলত মধুপুরের লাল মাটি—যা তুলনামূলকভাবে শক্ত। রমনা, মগবাজার, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, মিরপুর, গুলশান, তেজগাঁও—এ জাতীয় এলাকাগুলো ভূতাত্ত্বিকভাবে কিছুটা নিরাপদ বলে মনে করছেন ভূতত্ত্ববিদ সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তবে তিনি সতর্ক করছেন—এলাকার মাটি শক্ত হলেও ভবনের গুণগত মানই শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নির্ধারণ করবে।

বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারীর মতে, ঢাকার কোন এলাকা নিরাপদ—এটা ভবন পরীক্ষা ছাড়া বলা অসম্ভব। দুই–তিন তলা অনুমোদনের ওপর সাত–আট তলা নির্মাণ, পুরোনো ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, নিম্নমানের কাঁচামালে নির্মাণ—এসব কারণে শক্ত মাটির এলাকাও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। রাজউক জানিয়েছে, ঢাকার ৯০ শতাংশ ভবনই বিল্ডিং কোড অনুসরণ করেনি।

নরম মাটি ও ভরাট জমির কারণে নতুন গড়ে ওঠা এলাকা—যেমন বসুন্ধরা, আফতাবনগর—তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের আগে মাটিকে ‘গ্রাউন্ড ইমপ্রুভমেন্ট টেকনিক’ দিয়ে প্রস্তুত না করলে ভূমিকম্পে ভবন দুলে উঠতে পারে এবং ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

ঝুঁকির আরেক বড় কারণ হলো ‘ব্লাইন্ড ফল্ট’—যেগুলো ভূপৃষ্ঠে চিহ্ন দেখা না গেলেও ভেতরে সক্রিয়। ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলের এই ব্লাইন্ড ফল্ট ঢাকার জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করে।

পুরান ঢাকার সরু রাস্তা ও গা–ঘেঁষা ভবন দুর্যোগের সময় উদ্ধারকাজকে কঠিন করবে। অন্যদিকে নতুন ঢাকায় মাটি ও ভবন নির্মাণের মান বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকাকে নিরাপদ করতে হলে ভবনগুলোকে গ্রিন–ইয়েলো–রেড জোনে ভাগ করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিলগালা করা, অনুমোদন যাচাই কঠোর করা এবং রেট্রোফিটিংয়ের মতো কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। তবে এসব বাস্তবায়নে ‘নির্দয় সিদ্ধান্ত’ ছাড়া উপায় নেই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা