
মাত্র ২৫ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক টেনিস অঙ্গনে নিজের জায়গা করে নিচ্ছিলেন রাধিকা যাদব। খেলার পাশাপাশি গুরগাঁওয়ে নিজেই পরিচালনা করতেন একটি টেনিস একাডেমি। সমাজের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত কোচিংও দিতেন তিনি। পরিবারের আর্থিক ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন দৃঢ়ভাবে। কিন্তু প্রতিবেশীদের বিদ্রুপ আর সমাজের বাঁকা কথার কাছে হার মানলেন তার বাবা—এবং সেই পরিণতিই হয়ে উঠল রাধিকার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, হরিয়ানার গুরগাঁও জেলার সুশান্ত লোক-টু এলাকায় বসবাসকারী রাধিকাকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার নিজ বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করেন বাবা দীপক যাদব। ৫৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার থেকে মেয়ের ওপর গুলি চালান। পাঁচ রাউন্ড গুলির মধ্যে তিনটি লাগে রাধিকার শরীরে। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার খবর পেয়ে তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে নিহতের চাচা কুলদীপ উপস্থিত থাকলেও বাবা-মা কেউই ছিলেন না। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দীপক যাদবকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে দীপক স্বীকার করেন, ‘যাকে গুলি করেছি, সে আমার মেয়ে। একজন আন্তর্জাতিক টেনিস খেলোয়াড়।’ এরপর পুলিশ তার রিভলবারটি জব্দ করে এবং সেদিন সন্ধ্যায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গুরগাঁও থানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বিনোদ কুমার জানান, “দীপক মানসিকভাবে বেশ কিছুদিন ধরে চাপে ছিলেন। মেয়ের উপার্জনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশীরা তাকে কটূ কথা বলত। এসব কারণে গত ১৫ দিন ধরে তিনি গভীর হতাশায় ভুগছিলেন। অবশেষে সেই চাপেই এমন ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।”
২০০০ সালের ২৩ মার্চ জন্ম নেওয়া রাধিকা জাতীয় পর্যায়ে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ ক্যাটাগরিতে অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (AITA) র্যাঙ্কিংয়ে সেরা অবস্থানে ছিলেন ৭৫ নম্বরে। ডাবলসে সর্বোচ্চ ছিলেন ৫৩তম এবং সিঙ্গেলসে ৩৫তম। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (ITF) র্যাঙ্কিংয়েও ১১৩ নম্বর অবস্থানে ছিলেন তিনি। তবে ইন্ডিয়া টুডের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর আগে পাওয়া এক চোটের কারণে প্রতিযোগিতামূলক টেনিস থেকে কিছুটা দূরে চলে যান রাধিকা।
একা হাতে পরিবার চালানো সেই কন্যাকে রক্ষা করতে পারেনি সমাজের তথাকথিত সম্মান। সমাজের চোখরাঙানিতে হার মানলেন একজন বাবা—আর তার ফলেই ঝরে গেল এক সম্ভাবনাময় তারকার জীবন।





























