
সৌদি আরবে নিহত মো. হাবিব খান। ছবি: সংগৃহীত
জীবিকার সন্ধানে মাত্র ২১ বছর বয়সে স্বপ্ন আর বুকভরা আশা নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন মো. হাবিব খান। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। দালালকে দেওয়া সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই দশ মাসের মাথায় ভয়াবহ এক বাস্তবতার কাছে হার মানলেন তিনি।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাবিব। তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার অপেক্ষায় দিন গুনছেন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবকলস এলাকার শোকার্ত পরিবার ও এলাকাবাসী।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ‘ফ্রি ভিসায়’ সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন হাবিব। দালালের মাধ্যমে বিদেশ যেতে তাকে ঋণ করতে হয় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। ভেবেছিলেন ভালো কাজ পেয়ে পরিবারের হাল ধরবেন, কিন্তু বাস্তবতা ছিল নির্মম।
সৌদির মক্কা নগরের একটি হোটেলে কিছুদিন কাজ করার পর আর কাজ মিলছিল না। কখনও ছোটখাটো কাজে যুক্ত হলেও, যথাযথ পারিশ্রমিক পেতেন না। প্রবাস জীবনের কষ্ট, অনিশ্চয়তা ও হতাশার কথা প্রায়ই জানাতেন দেশে থাকা পরিবারকে।
প্রায় ১২ দিন আগে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করলে সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
হাবিবের বাবা মিজানুর রহমান কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ছেলে বিদেশ গেল স্বপ্ন নিয়ে, কিন্তু কাজ না পেয়ে কষ্টে ছিল। ঋণের টাকা শোধ করতে পারেনি, এখন লাশ হয়ে ফিরবে। আমি শুধু শেষবারের মতো তার মুখটা দেখতে চাই।
কান্নাজরিত কণ্ঠে হাবিবের বড় বোন সুইটি আক্তার বলেন, ভাইয়ের লেখাপড়া বাদ দিয়ে সুখের জন্য বিদেশে পাঠালাম। আমার আদরের ভাইটাকে কীভাবে আল্লাহ নিয়ে গেল। আমার ভাইকে না নিয়ে আমাকে নিয়ে যেত আল্লাহ।
স্থানীয়রা জানান, হাবিবের অকাল মৃত্যুতে পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন সবাই।
মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেহ আহাম্মদ বলেন, হাবিবের মৃত্যুর খবর আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বিদেশ থেকে মরদেহ আনার বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
একজন হতভাগ্য প্রবাসীর পরিবারের এই কঠিন সময়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি স্থানীয় জনগণ ও শোকার্ত পরিবারের আবেদন— যত দ্রুত সম্ভব হাবিব খানের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হোক, যেন বাবা-মা একবারের জন্য ছেলের মুখটি দেখতে পারেন।





























