শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক জাতীয় ১১ নভেম্বর ২০২৫, ৭:৪১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

নির্বাচনী ইতিহাসে প্রথমবার ভোটের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে

ইসির আচরণবিধি জারি, ভোটের প্রচারে ড্রোন-পোস্টার নিষিদ্ধ


 

Election regulations

দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রথমবার ভোটের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের প্রচারে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে সংস্থাটি। এতে ড্রোন, পোস্টার ও বিদেশে প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রথমবার ভোটের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, একজন প্রার্থী তার আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন, যার দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ও প্রস্থ ৯ ফুটের বেশি নয়। এছাড়া একমঞ্চে সব প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা এবং আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

ইসি জানিয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থীকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। দলীয় পর্যায়ে একই অঙ্কের অর্থদণ্ড এবং গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও কমিশনের হাতে থাকবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ
বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন, তবে এর আগে অ্যাকাউন্টের নাম, আইডি ও ইমেইল ঠিকানা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুল তথ্য, বিকৃত ছবি, ঘৃণাত্মক ভাষা বা বানোয়াট কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ বা সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে উসকানিমূলক বক্তব্য বা চরিত্র হননমূলক পোস্ট করলে তা নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

বিদেশে প্রচারণা ও পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী বিদেশে সভা, সমাবেশ বা প্রচারণা চালাতে পারবে না। ভোটের প্রচারে পোস্টার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিলবোর্ডে আলোর ব্যবহার কেবল ডিজিটাল বিলবোর্ডে সীমিত রাখা হয়েছে; আলোকসজ্জা ও পলিথিন বা পিভিসি ব্যানার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

শব্দ, পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিধান
প্রচারে শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে রাখতে হবে। ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। প্রচারে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যম ও প্রার্থীদের যৌথ ঘোষণা
প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে সব প্রার্থীকে একমঞ্চে এনে ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ রাখছে ইসি। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা একদিনে সব প্রার্থীর ঘোষণাপত্র পাঠের ব্যবস্থা করবেন।

নতুন ভোটিং ব্যবস্থা
নতুন আচরণবিধিতে প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু হয়েছে। দেশের তিন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।

সংস্কার কাজের সমাপ্তি
আচরণবিধি ও সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) জারির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে- নির্বাচনি আইন সংস্কারের সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ভোটার তালিকা আইন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিধান, ইসি সচিবালয় আইন, ভোটকেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ নীতিমালা- সবই হালনাগাদ করা হয়েছে।

ইসি বলছে, ‘আসন্ন নির্বাচনে সমান সুযোগ, সুষ্ঠু প্রচার ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।’