শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক জাতীয় ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা জনপ্রিয় করতে কোরিয়ান 'মোবাইল ল্যাব'


ঢাকা থেকে মো. মহিবুল্লাহ, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩:

বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ও জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক সহযোগিতায় শুরু হয়েছে ‘মোবাইল সায়েন্স ল্যাব’ প্রকল্প। ভিন্নধর্মী এ প্রকল্পের আওতায় ‘মোবাইল সায়েন্স মিউজিয়াম’ নামের ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরি পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুল-কলেজে পাঠানো হবে। কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সীর (কইকা) অর্থায়নে এ উদ্যোগটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষিণ কোরিয়ার হানইয়াং ইউনিভার্সিটি। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লী উন-ইয়ং ও কোরিয়া ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. জিন জুং-ইল। আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দীক।

1378080_622934794395102_1535215498_n

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ঢাকায় নিযুক্ত কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত লী উন-ইয়ং

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. ইউসুফ আলী মোল্লা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও বাংলাদেশে এর অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে এ প্রকল্প কিভাবে এ দেশে তরুণদের মাঝে বিজ্ঞান শিক্ষা জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রাখবে তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করেন। অধ্যাপক মোল্লা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ড. জিন জুং-ইলের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

অধ্যাপক জুং-ইল কোরিয়ার সেকাল ও একালের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে গবেষণা ও উন্নয়নই কোরিয়াকে আজকের এ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশও অগ্রগতির পথে হাঁটছে মন্তব্য করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সায়েন্স মোবাইল মিউজিয়াম সে অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্রদূত লী উন-ইয়ং বাংলাদেশ-কোরিয়া সম্পর্কের গৌরবোজ্জ্বল ৪০ বছর পূর্তির কথা স্মরণ করে এ সম্পর্ককে আগামী দিনে আরও সুসংহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মোবাইল সায়েন্স ল্যাব প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে দক্ষিণ কোরিয়ার দীর্ঘদিনের গবেষণার সুফল ভোগ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কোরিয়া সরকার বাংলাদেশকে সবসময়ই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নে দু’দেশ পুরনো বন্ধু। বর্তমানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলোতে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ সে বন্ধুত্বে নতুন মাত্রা যোগ করবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান জাতীয় উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই মন্তব্য করে বলেন, “আমাদের মেধা আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের এ দেশে গবেষণা কেন্দ্র চালু করাই তার প্রমাণ।” উপস্থিত শিক্ষার্থীদেরকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, “তোমরা এভারেস্ট জয় করে এসেছ। তোমাদের অসাধ্য কিছু নেই। তোমরাই আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ।” বিজ্ঞান শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে মন্ত্রী শিক্ষকদেরকে শ্রেনীকক্ষে পাঠদান কৌশলে আনন্দদায়ক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান। কোরিয়াকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে ধন্যবাদ জানান ও এ উদ্যোগের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।

ল্যাব ঘুরে দেখছেন অতিথিবৃন্দ

ল্যাব ঘুরে দেখছেন অতিথিবৃন্দ

উপস্থিত সবাইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বাগত জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দীক বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ স্কুল-কলেজে পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা নেই। মোবাইল সায়েন্স মিউজিয়াম সুবিধাবঞ্চিত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদেরকে ল্যাব বিষয়ে মৌলিক ধারণা দিতে সক্ষম হবে এবং এটি তাদের জন্য একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে বলে তিনি মনে করেন। উপাচার্য বলেন, কোইকার সৌজন্যে এমন চমৎকার একটি সুযোগ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে এবং তাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বাংলাদেশ-কোরিয়া সম্পর্কের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি প্রত্যাশা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা সিনেট ভবনের বারান্দায় স্থাপিত মোবাইল সায়েন্স মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন।

বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকারম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবনের সেমিনার কক্ষে ‘হাই টেকনোলজি ইন স্কুল সায়েন্স টেক্সটবুক’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করেন হানইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের টিনএজার ইনটু সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (টিআইএসটি) সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ছই জুং-হুন।