শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
খ ম হারূন মতামত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২:১৬ অপরাহ্ন
শেয়ার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বটতলা ও ডাকসু নির্বাচন


Bottola

ছবি: সংগৃহীত

৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট’এর পোস্ট গ্রাজুয়েট ফাইনাল সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষা পর্যবেক্ষণে এসেছিলাম একজন শিক্ষক হিসেবে। অথচ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক‍্যাম্পাসে পা দেবার সাথে সাথে আমি একজন ছাত্র হয়ে যাই। ছাত্র জীবনের স্মৃতিগুলো আমার মনকে অশান্ত করে তোলে। সুন্দর স্মৃতিগুলো এখানে সেখানে ভেসে বেড়ায়।

কলাভবনের বটতলায় তখন একটি চ‍্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠান চলছিলো। অংশগ্রহণে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ছাত্র-ছাত্রীরা। বটতলার সামনে কিছু দর্শকও সমবেত হয়েছে তাদের ছাত্র নেতাদের বক্তব্য শোনার জন‍্য।

কলাভবনের সামনের এই বিশাল বটগাছটির একটি ইতিহাস আছে। আজকের অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের তা অবশ্য জানার কথা নয়।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থা দেখতে ঢাকা আসেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, সঙ্গে তার স্ত্রী জোয়ান বেনেট কেনেডি এবং ভাই রবার্ট কেনেডির ছেলে জোসেফ প্যাট্রিক কেনেডি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের বিজয় অভিবাদন জানাতে তিনি ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছান। সেখানে তাকে স্বাগত জানান সে সময়ের ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে যে বিশাল বটগাছটি ছিলো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেটি সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলেছিলো। তাদের আশঙ্কা ছিল বটগাছটির কারণে এখান থেকে আবারও গড়ে উঠবে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন। সকল ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বটতলা। বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনের সময় ছাত্ররা এই বটতলাতেই এসে সমবেত হয়েছিলো। সিনেটর কেনেডি নিজ হাতে পুরোনো বটগাছের জায়গায় নতুন একটি বটগাছের চারা লাগান, তারপর ছাত্র সমাবেশে ভাষণ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির অকৃত্রিম সমর্থন ছিল আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তখন মার্কিনবিরোধী মনোভাব ছিলো সকল মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রছাত্রীদের মনে।

সিনেটর কেনেডি চলে যাওয়ার পর সে সময়ের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র সিনেটর কেনেডির লাগানো সেই বটগাছের চারাটি তুলে ফেলে সেখানেই নতুন আরও একটি চারাগাছ লাগান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের সামনে আজকের যে বিশাল বটগাছ সেটি সেদিনের সেই স্মৃতি বহন করে চলেছে।

আজ আমি গৌরব বোধ করি, সেদিন সে স্থানে আমারও উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিলো।

উল্লেখ্য, এরপর ১৯৭২ সালের মে মাসের ২০ তারিখ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ডাকসুসহ সব হলগুলোতে বিজয় লাভ করে শুধুমাত্র সূর্যসেন হল বাদে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং জিএস মাহবুব জামান।

আমরা আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আরেকটি ডাকসু নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। অনেক সুন্দর পরিবেশে সকল ছাত্রছাত্রী তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন – এই প্রত্যাশা।

খ ম হারূন: গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।