শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
মাহবুব কিংশুক মতামত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৫ অপরাহ্ন
শেয়ার

এক্সপ্লেইনার

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মানে আসলে কী?


Palestine

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ইতিহাস গড়লেন—প্রথমবারের মতো ব্রিটেন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল। তিনি বললেন, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আশা ফিরিয়ে আনা এবং বহুল আলোচিত দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে সামনে এগিয়ে নেওয়া।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই স্বীকৃতির অর্থ কী? ফিলিস্তিনিদের জন্য এর প্রভাব কী হতে পারে? আর আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গনে এর বার্তাটাই বা আসলে কী?

প্রতীকী অথচ বড় পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্বীকৃতি বাস্তবে তাৎক্ষণিকভাবে গাজা বা পশ্চিম তীরের মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে না। কারণ ইসরায়েল এখনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মানতে নারাজ। তবে কূটনৈতিক অর্থে এটি এক বিশাল ঘটনা। যুক্তরাজ্যের মতো দেশ যখন ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে, তখন বার্তাটা যায় স্পষ্টভাবে—“আমরা দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে।”

প্রখ্যাত রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ড. জুলি নরম্যান এ বিষয়ে বলেন, “এটি এক ধরনের নৈতিক অঙ্গীকার। জমিনে তেমন কিছু না বদলালেও, ভবিষ্যতের আলোচনায় ফিলিস্তিনকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে।”

সেক্ষেত্রে কী কী বদলাতে পারে?
কূটনৈতিক সম্পর্ক: এখন ফিলিস্তিন লন্ডনে আনুষ্ঠানিক দূতাবাস খুলতে পারবে।
পাসপোর্ট স্বীকৃতি: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যদি রাষ্ট্রীয় পাসপোর্ট ইস্যু করে, যুক্তরাজ্য সেটিকে বৈধ বলে মেনে নেবে।
আন্তর্জাতিক আলোচনায় অবস্থান: শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে বলা যাবে, তারা আর শুধু “অঞ্চল” নয়, একটি “রাষ্ট্র”।
কিন্তু হামাস নয়: যুক্তরাজ্য কেবল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, হামাসকে নয়। হামাস আগেই ব্রিটিশ আইনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ।

ইতিহাসের ছায়া
এই স্বীকৃতি বোঝার জন্য ইতিহাসে ফিরে তাকাতে হয়। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের পরিকল্পনা ছিল—একটি ইহুদি রাষ্ট্র ও একটি আরব রাষ্ট্র। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করে পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম। তখন থেকেই এই অঞ্চলগুলোকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে আসছে ফিলিস্তিনিরা।
আন্তর্জাতিক মহল বহু বছর ধরে “দুই-রাষ্ট্র সমাধান” নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১৪৪টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে স্বীকৃতিদানকারী দেশ খুব কম। গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এ পদক্ষেপ নিয়েছিল। ফ্রান্সও শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে চলেছে। এবার যুক্তরাজ্যের মতো বড় শক্তির যুক্ত হওয়া আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।
এতে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই আলাদা হয়ে পড়ছে, কারণ তারা এখনো ইসরায়েলের পক্ষেই দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে— তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া, শান্তির আলোচনায় তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠানো যে দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে পাশ কাটানো যাবে না। গাজা বা পশ্চিম তীরে সাধারণ মানুষের জীবনে তাত্ক্ষণিক পরিবর্তন না এলেও, এই সিদ্ধান্ত কূটনীতির ময়দানে ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন দরজা খুলে দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অবলম্বনে