রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি ঘটছে যেকারণে


indian-passport
বিশ্বের ১৯৯টি দেশের মধ্যে হেনলি পাসপোর্ট সূচক ২০২৫-এ ভারতের অবস্থান নেমে এসেছে ৮৫তম স্থানে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ নিচে। যদিও ভারতীয় নাগরিকরা বর্তমানে ৫৭টি দেশে ভিসা-মুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা পান, তবুও বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে এই পতন কেবল সংখ্যার বিষয় নয়—এর পেছনে রয়েছে নানা জটিল কারণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাসপোর্টের মান নির্ধারণে কেবল ভিসা-মুক্ত দেশের সংখ্যা নয়, একটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কূটনৈতিক প্রভাব, নিরাপত্তা অবস্থা, অভিবাসন নীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি—সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভারতীয় পাসপোর্টের সীমাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলিতে। প্রতিবেশী দেশ যেমন ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ ভারতীয় নাগরিকদের তুলনামূলকভাবে সহজে প্রবেশাধিকার দিলেও, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতে ভিসা পেতে প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এক ভ্রমণ প্রভাবশালী সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন, “ভুটান বা শ্রীলঙ্কা যেতে যেখানে সহজ, সেখানে ইউরোপ বা আমেরিকার ভিসা পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়, ব্যয়ও অনেক বেশি।”

বিশ্বজুড়ে দেশগুলো নিজেদের নাগরিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার বাড়াতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। উদাহরণস্বরূপ, চীন গত দশ বছরে তার নাগরিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত দেশ সংখ্যা ৫০ থেকে ৮২-এ উন্নীত করেছে, ফলে তাদের র‍্যাংক ৯৪ থেকে ৬০-এ উঠেছে। অন্যদিকে, ভারত ২০১৫ সালে ৫২টি দেশে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার থেকে ২০২৪ সালে ৬২টিতে উন্নীত হলেও র‍্যাংকিংয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের পাসপোর্টের মান অবনতি হওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক বাস্তব কারণ—

কূটনৈতিক উদ্যোগের ঘাটতি: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের দ্বিপাক্ষিক ও বহু-পাক্ষিক ভ্রমণ চুক্তির সংখ্যা খুব বেশি বাড়েনি।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা: ২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ ভিসা ও পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০০-র বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি: কিছু দেশের কাছে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নাগরিক অধিকারের ইস্যু কূটনৈতিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

অর্থনৈতিক বৈষম্য ও সীমিত কূটনৈতিক প্রভাব: অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি করলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের ‘ভিসা প্রভাব’ তুলনামূলকভাবে কম।

অভিবাসন ও অবৈধ অবস্থান সমস্যা: বহু ভারতীয় বিদেশে দীর্ঘমেয়াদি অবৈধভাবে অবস্থান করে, যা গন্তব্য দেশগুলোর দৃষ্টিতে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি করে।

পশ্চিমা দেশগুলির নিরাপত্তা-সংক্রান্ত শঙ্কা: অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদবিরোধী নীতি কঠোর হওয়ায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়ায় আরও সতর্কতা অবলম্বন করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের পাসপোর্টের অবস্থান উন্নত করতে হলে এখনই প্রয়োজন-

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা

নতুন ভ্রমণ চুক্তি ও ভিসা পারস্পরিকতা বৃদ্ধি

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করা

বৈশ্বিক পরিসরে ভারতের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা

যদি এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, তবে আগামী বছরগুলোতে ভারতীয় পাসপোর্ট আবারও বিশ্ব সূচকে নিজেদের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ফিরে পেতে পারে।

সংক্ষেপে, ভারতের পাসপোর্টের অবনতি কেবল ভিসা সংখ্যা কম হওয়ার জন্য নয়—বরং এটি একটি দেশের কূটনৈতিক সক্রিয়তা, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি, ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অবস্থান প্রতিফলিত করে।