রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ৭ নভেম্বর ২০২৫, ৬:০৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

সুদানে কেন মুসলিমদের রক্ত বন্যা বইছে?


sudan

ছবি : সংগৃহীত

উত্তরপূর্ব আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশ সুদান আজ এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের কবলে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মৃত্যু আর ধ্বংসের বিভীষিকা। রাস্তা ঘাটে পড়ে আছে শত শত মানুষের লাশ—দাফন করারও কেউ নেই। যুদ্ধের ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে পচা লাশের গন্ধ, জনপদ পরিণত হয়েছে মৃত্যুভূমিতে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই মুসলিম দেশে এমন রক্তবন্যা বইছে কেন?

উত্তর খুঁজতে গেলে যেতে হয় দুই প্রভাবশালী জেনারেলের ক্ষমতার লড়াইয়ের দিকে—জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান ও মোহামেদ হামদান হেমেতি দাগালো। একসময় তারা ছিলেন ঘনিষ্ঠ মিত্র, কিন্তু আজ তারা একে অপরের চরম শত্রু। আর তাদের এই ব্যক্তিগত ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পিষ্ট হচ্ছে সুদানের সাধারণ মানুষ।

২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে বুরহানের নেতৃত্বাধীন সরকারি সেনাবাহিনী এসএএফ (Sudanese Armed Forces) লড়ছে দাগালো নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ (Rapid Support Forces)-এর বিরুদ্ধে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, আর প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।

সুদানের এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সূত্রপাত ২০১৯ সালে। ওই বছর দীর্ঘ ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকা একনায়ক ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ঐক্যবদ্ধ হয় সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী। জনগণের বিক্ষোভকে পুঁজি করে তারা একসঙ্গে অভিযান চালিয়ে বশিরকে সরিয়ে দেয়। তখনই বুরহান ও দাগালো একসাথে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন।

বশির পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক কাউন্সিল (TMC)-এর নেতৃত্ব দেন বুরহান, সহকারী ছিলেন দাগালো। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই দুই জেনারেল যৌথভাবে দেশ চালান। পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে নতুন বিক্ষোভ শুরু হলে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

কিন্তু ২০২১ সালে তারা আবারও সেই বেসামরিক সরকার ভেঙে দেন এবং প্রধানমন্ত্রী আবদালা হামদককে গ্রেপ্তার করেন। নতুন করে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দুই জেনারেলের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়—কে হবে দেশের প্রকৃত শাসক?

জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার চাপ দিলে দাগালো বুঝে যান, তার আরএসএফ বাহিনী যদি সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়, তবে তিনি হারাবেন রাজনৈতিক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ। এই আশঙ্কা থেকেই ২০২৩ সালের এপ্রিলে রাজধানী খার্তুমে বুরহানের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে আরএসএফ। সেই যুদ্ধই আজ ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে দাগালো ব্যাপক অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে। আরএসএফ এখন ড্রোন ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে সরকারি বাহিনীর ওপর ভয়ংকর হামলা চালাচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এল-ফাশের ইতিমধ্যেই তাদের দখলে, যেখানে চলছে ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ।

আজ সুদানের আকাশে ভাসছে ধোঁয়া, মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে মুসলমানের লাশ। অথচ এই সবকিছুই ঘটছে দুই মুসলিম জেনারেলের ক্ষমতার লালসা ও প্রতিহিংসার কারণে। একসময় যারা একত্রে একনায়ককে উৎখাত করেছিলেন, আজ তারাই পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন ভয়াবহ যুদ্ধ চালাচ্ছেন যে, সুদানের মাটিতে মুসলমানের রক্তে বইছে গঙ্গা।