শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

‘বায়ুমণ্ডল’ না থাকলেও চন্দ্রপৃষ্ঠে লোহায় মরিচা পড়ে!


Moon

এই হেমাটাইট (লোহার খনিজ) চাঁদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বড় বড় সংঘর্ষ বা উল্কাপিণ্ডের ধাক্কার কারণে তৈরি হয়েছে

চাঁদে লোহা বা লৌহজাত কিছু থাকলে তাতে মরিচা পড়ে। অথচ চাঁদের বায়ুমণ্ডল নেই। অবাক করা ব্যাপার হলেও এটাই সত্য। চীনের মহাকাশ মিশন ছাং’এ-৬ চন্দ্রপৃষ্ঠের যেসব নমুনা এনেছে সেগুলোতে আয়রন অক্সাইড পেয়েছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। যা চাঁদের পৃষ্ঠে জারণ প্রক্রিয়া ঘটার ইঙ্গিত দেয়।

রোববার চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, শানতোং ইউনিভার্সিটি এবং চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছে। বিজ্ঞানীদের একটি দল মহাকাশ সংস্থা থেকে পাওয়া ৩ হাজার মিলিগ্রাম চাঁদের মাটির নমুনা পরীক্ষা করে এসব তথ্য জানতে পেরেছেন। জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্সেসে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এই খনিজগুলো থেকে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায় যে চাঁদের সাউথ পোল-আইটকেন বেসিন এলাকার চারপাশের চৌম্বকীয় অসঙ্গতি সম্ভবত উল্কাপিণ্ডের ধাক্কা বা বড় ধরনের সংঘর্ষের ফলেই তৈরি হয়েছিল।

শানতোং ইউনিভার্সিটির স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি স্কুলের ডেপুটি ডিরেক্টর লিং চোংছেং বলেন, আমরা প্রথমে চাঁদের মাটির পরীক্ষা করা তথ্যে হেমাটাইট (এক ধরনের লোহার খনিজ) থাকার ইঙ্গিত পাই। এরপর, আমরা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ-এর মতো বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে খনিজগুলোর গঠন ও ধরন নিশ্চিত করি। অবশেষে, আমরা ছাং’এ-৬ এর আনা চাঁদের নমুনায় এই প্রথম হেমাটাইট এবং ম্যাগহেমাটাইট (অন্য এক ধরনের লোহার খনিজ) খুঁজে পেয়েছি। এই আবিষ্কার চাঁদের জারণ প্রক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে এক বড় সাফল্য এনে দিয়েছে।”

পৃথিবীর সাথে চাঁদের বড় পার্থক্য হলো, চাঁদে সুরক্ষার জন্য বায়ুমণ্ডল নেই এবং পানিও খুব কম। এই কারণে, চাঁদের পরিবেশ এমন যে সেখানে সহজে লোহায় মরিচা পড়ার মতো জারণ প্রক্রিয়া ঘটার কথা নয়। বিজ্ঞানীরা আগে ভাবতেন যে, চাঁদে লোহা যেন কখনোই মরিচা পড়ে না।
কিন্তু শক্তিশালী জারিত খনিজ খুঁজে পাওয়ায় প্রমাণ হলো যে, চাঁদের পৃষ্ঠেও আসলে শক্তিশালী জারণ প্রক্রিয়া ঘটেছিল।

গবেষকরা ধারণা করছেন, এই হেমাটাইট (লোহার খনিজ) চাঁদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বড় বড় সংঘর্ষ বা উল্কাপিণ্ডের ধাক্কার কারণে তৈরি হয়েছে।

তারা মনে করেন, এই সংঘর্ষগুলোর সময় ম্যাগহেমাটাইট এবং ম্যাগনেটাইটের মতো খনিজ তৈরি হয়েছিল।

এই খনিজগুলোই সম্ভবত সাউথ পোল-আইটকেন বেসিনের চারপাশে যে চৌম্বকীয় অসঙ্গতি (অস্বাভাবিক চৌম্বক শক্তি) দেখা যায়, সেগুলোর প্রধান কারণ।

লিউ নামের এক গবেষক বলছেন, “এই আবিষ্কারটা খুবই জরুরি। এটিকে চাঁদের জারণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষের জানার পথে নতুন শুরু বলা যায়।”