
চীনের থিয়েনচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ডিএনএ সিনথেসিস বা সংশ্লেষণের কাজে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন। সম্প্রতি তারা মানুষের জিনোমের দশ লাখেরও বেশি বেস-পেয়ারের একটি অংশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করে সফলভাবে ইঁদুরের ভ্রূণে স্থানান্তর করেছেন।
১০ জুলাই নেচার মেথডস সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, এটি নতুন চিকিৎসা সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে, বিশেষ করে সিকল সেল অ্যানিমিয়া, জন্মগত বধিরতা ও পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের মতো জটিল রোগে এনে দিতে পারে সমাধান। গবেষক দলের নেতা ইউয়ান ইয়িংচিন বলেন, মানুষের জিনোম তৈরি করা মানে কোটি টুকরোর একটি জিগস পাজল জোড়া লাগানোর মতো কঠিন। কারণ মানুষের ডিএনএর অর্ধেকেরও বেশি পুনরাবৃত্ত সিকোয়েন্স, যা দেখতে একই মনে হলেও ভিন্নতা আছে।
সিননাইস পদ্ধতি
ইউয়ানের দল সিননাইস নামের নতুন একটি পদ্ধতি তৈরি করেছে। এতে মানুষের ওয়াই ক্রোমোজোমের এজেডএফএ নামের অংশটি সংশ্লেষ করা হয়েছে, যা মুছে গেলে পুরুষ বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। ডিএনএ’র এ অঞ্চলের ৬৯ শতাংশ অংশেই রয়েছে পুনরাবৃত্তি, তাই এর সংশ্লেষও চ্যালেঞ্জিং ছিল। গবেষকরা ডিএনএ-টিকে প্রথমে ২০০টিরও বেশি ছোট টুকরোয় ভাগ করেন। পরে সেগুলোকে ধাপে ধাপে জোড়া লাগান। সবশেষে ক্রিসপার-ক্যাস৯ প্রযুক্তি তারা ১১ লাখ ৪০ হাজার বেস-পেয়ারের সম্পূর্ণ কৃত্রিম ক্রোমোজোম তৈরি করেন।
নিরাপদ স্থানান্তর
এ কাজে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিশাল এই জিনোম অংশটিকে ইঁদুরের ভ্রূণে স্থানান্তর। এজন্যও গবেষকরা নতুন কৌশল নেন। এ কাজে ইস্টের নিউক্লিয়াসকে প্রাকৃতিক বাহক হিসেবে ব্যবহার করেন।
ইউয়ান বলেন, ‘মহাকাশযান যেমন করে নভোচারীদের চাঁদে নিয়ে যায়, তেমনি ইস্টের নিউক্লিয়াস আমাদের কৃত্রিম জিনোমকে নিরাপদে ইঁদুরের ভ্রূণে পৌঁছে দেয়।’
পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব, ক্যানসারসহ জিনোম-সম্পর্কিত নানা রোগের চিকিৎসায় এ গবেষণা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। মানুষের অঙ্গের ঘাটতি মেটাতে শূকরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রযুক্তির সঙ্গে এ পদ্ধতির সংমিশ্রণে অঙ্গগ্রহীতার আয়ু কয়েক বছর থেকে কয়েক দশকে বাড়ানো যেতে পারে বলেও জানান বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বে মানব জিনোম নিয়ে বেশিরভাগ গবেষণা এখনো এক লাখ বেস-পেয়ারেই সীমাবদ্ধ। তাই চীনের এ অগ্রগতি আন্তর্জাতিকভাবে বড় সাফল্য। তবে ইউয়ান মনে করিয়ে দেন, ‘আমরা প্রযুক্তি উন্নয়নের ধাপে আছি, তাই বায়োসিকিউরিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ থিয়েনচিন বিশ্ববিদ্যালয় আগেই ২০টি দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে থিয়েনচিন বায়োসিকিউরিটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছিল, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইউয়ান আরও বলেন, আগে মানুষ জিনের গঠন পড়া আর সম্পাদনা করতে পারতো। এখন মানুষ সেই জিনে নতুন অধ্যায় লেখার মতো দক্ষতা অর্জন করেছে


























