
সরকারি কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে একক কর্তৃত্ব নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতদিন পর্যন্ত প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের বদলি করত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), আর সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত বদলি করত শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কিন্তু নতুন “সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি/পদায়ন নীতিমালা, ২০২৫” অনুযায়ী এখন থেকে সব ধরনের বদলি ও পদায়নের দায়িত্ব থাকবে সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে।
এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা বলছেন, “মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো নীতি নির্ধারণ, বদলি করা নয়। বিকেন্দ্রীকরণের যুগে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা অগ্রহণযোগ্য।”
তাদের দাবি, এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষা ক্যাডারের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে এবং সচিবালয়ে তদবির ও প্রশাসনিক জটিলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত কখনো ভালো ফল দেয় না। মন্ত্রণালয় যদি বদলি নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তবে নীতি নির্ধারণের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে প্রকাশিত সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নতুন নীতিমালা ৩০ জুন ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।
এর আওতায় প্রভাষক থেকে অধ্যাপক, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ- সব পদে বদলি ও পদায়নের আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করতে হবে।
প্রার্থীদের নিজেদের পারসোনাল ডেটা শিট (পিডিএস) হালনাগাদ করে নির্দিষ্ট অনলাইন ফর্মের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হবে। প্রতিটি আবেদন প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে অগ্রায়নের পর মন্ত্রণালয়ে যাবে। কোনো আবেদন পেন্ডিং রাখা যাবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনলাইন ব্যতীত অন্য কোনো মাধ্যমে পাঠানো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। প্রতি ১৫ দিন অন্তর আবেদনগুলো মূল্যায়ন করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। একজন শিক্ষক একবার আবেদন করার পর তিন মাসের মধ্যে পুনরায় আবেদন করতে পারবেন না। বদলির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তদবির বা ডিও লেটার ব্যবহার অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। অসম্পূর্ণ বা হালনাগাদহীন পিডিএস গ্রহণ করা হবে না। বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শিক্ষা ক্যাডার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক হয়।
প্রথম বৈঠকে মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পর্যায়ের বদলির নিয়ন্ত্রণ চায়। দ্বিতীয় বৈঠকে আলোচনা হয়, সহকারী অধ্যাপক পর্যন্ত বদলির ক্ষমতা মাউশির কাছেই থাকবে।
কিন্তু হঠাৎ করেই মন্ত্রণালয় নীতিমালা সংশোধন করে সব ধরনের বদলির ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেয়। এই সিদ্ধান্তকে শিক্ষা কর্মকর্তারা “অপ্রত্যাশিত ও একতরফা” বলে অভিহিত করেছেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, অনলাইন ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তবে অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন, ডিজিটাল প্রক্রিয়াতেও অনিয়ম ও প্রভাব খাটানোর সুযোগ রয়ে গেছে।
মাউশির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনলাইন হলেও প্রভাব ও কর্তৃত্বের খেলা চলে। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের নামে পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটালি কেন্দ্রীয়করণ করা ঠিক নয়।”
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ শাখার একাধিক সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সবাই এই সিদ্ধান্তের পক্ষে নন। তবে শিক্ষা উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের আগ্রহেই নীতিমালাটি পাস করা হয়েছে।



























