
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় আসন সংখ্যা কমানোসহ নিয়মে বড় পরিবর্তন এসেছে। এ বছর মোট ২২৫টি আসন কমানো হয়েছে এবং শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সন্তানদের পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে। ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে ভর্তি পরীক্ষা। আগের মতো এবারও চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা ও রাজশাহীতে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যাহ পাটোয়ারী ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. ইকবাল শাহীন খান।
পোষ্য কোটা বাতিল, আসন শূন্য থাকবে
গতবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১৬৬টি পোষ্য কোটা ছিল। এ বছর সেই কোটা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে।
রোববার সকালে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “পোষ্য কোটা রাখলে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের চাপ সৃষ্টি হয়। অস্থিতিশীল পরিবেশ এড়াতেই এটি বাতিল করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, পোষ্য কোটার ৫৪টি বিভাগে মোট ৫৪টি আসন এবার শূন্য থাকবে।
আসন কমলো ২২৫টি, ৪ হাজার ৩০৫ আসনে ভর্তি পরীক্ষা
চবিতে এবার মোট আসন থাকবে ৪ হাজার ৩০৫টি, যার মধ্যে সাধারণ আসন ৩ হাজার ৭৮৬টি এবং ৫১৯টি আসন কোটা ভিত্তিক। গত বছর আসন ছিল ৪ হাজার ৬৮৪টি।
এবার ১৮টি বিভাগে মোট ২২৫টি আসন কমানো হয়েছে। বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রসায়ন, রাজনীতিবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, আইন, লোকপ্রশাসনসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে আসন ১১০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। ইতিহাস, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস, আরবি ও শিক্ষা বিভাগেও আসন কমেছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী বলেন, “ফলাফলভিত্তিক পাঠ্যক্রমে এক ক্লাসে ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রাখা যাবে না। তাই ক্লাস ভাগ ও মান বজায় রাখতে আসন কিছুটা কমানো হয়েছে।”
রয়েছে ৯ ধরনের কোটা
এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় ৯ ধরনের কোটা বজায় থাকবে। এর মধ্যে—
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২১২টি,
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১১১টি,
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৯৪টি,
অ-উপজাতি (পার্বত্য বাঙালি) ৫১টি,
শারীরিক প্রতিবন্ধী ২০টি,
বিকেএসপি ১১টি,
পেশাদার খেলোয়াড় ৫টি,
দলিত জনগোষ্ঠী ৯টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে।
জিপিএ যোগ্যতা কমানো হয়েছে
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় এ বছর আবেদন যোগ্যতার মানদণ্ড কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
এ ইউনিট (বিজ্ঞান): মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে ন্যূনতম জিপিএ ৭.৫০, আলাদাভাবে মাধ্যমিকে ৪ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৩।
বি ইউনিট (মানবিক): ন্যূনতম জিপিএ ৬.৫০, মানবিকে আলাদাভাবে ২.৫০ ও বিজ্ঞানে ৩।
সি ইউনিট (ব্যবসায় শিক্ষা): ন্যূনতম জিপিএ ৭.০০ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সময়সূচি পরিবর্তন
পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি (শুক্রবার) এ ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে। নতুন সূচি অনুযায়ী ৩ জানুয়ারি (শনিবার) ডি ইউনিট, ৫ জানুয়ারি (সোমবার) ডি–১ উপ–ইউনিট, ৭ জানুয়ারি (বুধবার) বি–১ উপ–ইউনিট, ৮ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বি–২ উপ–ইউনিট, ৯ জানুয়ারি (শুক্রবার) সি ইউনিট এবং ১০ জানুয়ারি (শনিবার) বি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পূর্বের সম্ভাব্য সময়সূচিতে বি–১ উপ–ইউনিটের পরীক্ষা ছিল ৫ জানুয়ারি, বি–২ উপ–ইউনিটের ৬ জানুয়ারি এবং ডি–১ উপ–ইউনিটের ১২ জানুয়ারি।
উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, “আমি চাই, ভর্তি পরীক্ষা একদিনেই সম্পন্ন হোক। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমবে। বিদেশের অনেক দেশেই এমন পদ্ধতি চালু আছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “পূর্বের সমস্যাগুলো কাটিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আমরা নতুনত্ব এনেছি। ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।”



























