শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

কুয়েতে দুই দশকে ৫ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর মৃত্যু


kuwait

বাংলাদেশ দূতাবাস, কুয়েত

উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুহার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত দুই দশকে দেশটিতে মারা গেছেন মোট ৪ হাজার ৯৯৮ জন বাংলাদেশি।

গড়ে প্রতি মাসেই প্রাণ হারাচ্ছেন ২০ জনেরও বেশি প্রবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংখ্যা প্রবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, কর্মপরিবেশের সংকট ও মানসিক চাপের গুরুতর বাস্তবতা তুলে ধরে।

বর্তমানে কুয়েতে কাজ করছেন প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার বাংলাদেশি। দূতাবাস জানায়, করোনার সময় মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যায়। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক বছরে মারা যান ৪৪০ জন প্রবাসী—এর মধ্যে ১৯০ জন হৃদরোগে এবং ১০৮ জন করোনায়। বাকি মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য জটিলতা। ওই সময়ে মাসিক গড় মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ জনের বেশি।

গত ২০ বছরে মোট মৃত্যুর মধ্যে সড়ক ও কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৫৪ জন। বাকিদের মৃত্যু ঘটেছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, আত্মহত্যা, ক্যানসার এবং অতিরিক্ত কাজের চাপজনিত কারণে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফেরত আসা মধ্যবয়সী প্রবাসীদের অনেকেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। উল্লেখযোগ্য অংশের বয়স মাত্র ২৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।

এই পরিস্থিতিকে “বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেন কুয়েতের কমিউনিটি নেতা ও ব্যবসায়ী আব্দুল হাই মামুন। তিনি বলেন, “অতিরিক্ত কাজ, অনিয়মিত জীবনযাপন, বিশ্রামের অভাব ও একাকীত্ব প্রবাসীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।”

তিনি স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক সহায়তা এবং শ্রমপরিবেশ উন্নয়নে কুয়েত সরকারের সঙ্গে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, কুয়েতে কোনো বাংলাদেশি মারা গেলে লাশ দ্রুত দেশে পাঠানোর জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা পাওয়া না গেলে দূতাবাস নিজ খরচে মৃতদেহ দেশে পাঠায়।

প্রবাসী কমিউনিটি নেতাদের মতে, কুয়েতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে এখনই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।