রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক দেশজুড়ে ৬ অগাস্ট ২০২৫, ৮:৫৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’- তার আগেই সব শেষ প্রবাসফেরত বাহারের


baharআড়াই বছর পর বাড়ি ফিরছিলেন ওমানপ্রবাসী মো. বাহার উদ্দিন। প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তার মন ছিল ব্যাকুল। ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। যে বাড়িতে তিনি ফিরতে চেয়েছিলেন, সেখানে ফিরলো তার প্রিয়জনদের নিথর দেহ। এক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো বাহারের স্ত্রী, মা, দুই বছর বয়সী শিশুকন্যাসহ সাতটি অমূল্য প্রাণ।

বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরবেলা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পথে রওনা হয়েছিলেন বাহার এবং তার পরিবার। আনন্দময় সে যাত্রায় আচমকা নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী এলাকায় পৌঁছানোর পর চালকের তন্দ্রার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসটি পাশের খালে পড়ে যায়।

janaja

জানাজা শেষে মরদেহগুলো স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়

বাহারসহ পাঁচজন কোনোভাবে গাড়ির গ্লাস ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারলেও ভেতরে আটকে পড়েন বাকি সাতজন। প্রায় দুই ঘণ্টা পানির নিচে ডুবে থাকার পর রেকার দিয়ে গাড়ি উঠিয়ে আনলে উদ্ধার হয় সাতটি নিথর দেহ। এই সাতজনের মধ্যে ছিলেন বাহারের মা, স্ত্রী, একমাত্র আদরের মেয়ে মিম, নানী, ভাইয়ের স্ত্রী এবং দুটি ছোট ভাতিজি রেশমি ও লামিয়া।

চোখের সামনে একের পর এক প্রিয়জনের নিথর দেহ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান বাহার। তিনি শুধু তার শিশুকন্যা মিমের নিথর দেহ বুকে জড়িয়ে ধরে ফুঁঁপিয়ে ফুঁঁপিয়ে কাঁদছিলেন। তার মুখে শুধু একটি কথাই ঘুরছিল, “তোর জন্য এসেছিলাম মা, তুই কেন লাশ হয়ে এলি!”

এই মর্মান্তিক ঘটনায় গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। একসঙ্গে সাতটি মৃতদেহ দেখতে পেয়ে এলাকার মানুষের চোখে জল। সবার মুখে একটিই প্রশ্ন—এই বিশাল ক্ষতি কীভাবে সামলাবেন বাহার?

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া রেশমি ও লামিয়ার জন্য কেনা নতুন স্কুলব্যাগ আর বইগুলো তাদের ঘরের এক কোণে পড়ে আছে, তাদের অনুপস্থিতির নীরব সাক্ষী হয়ে। এই ব্যাগ আর বইয়ের দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন তাদের বাবা-মা।

এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং আমাদের দেশের দুর্বল সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং চালকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার করুণ চিত্র। “স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার” লেখাটি এখন শুধু একটি অসম্পূর্ণ গল্পের শিরোনাম হয়ে থাকবে। বাহারের জীবনে এখন শুধু কবরের নীরবতা আর একরাশ বেদনার স্মৃতি।