শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
মাহমুদ নেওয়াজ জয় লাইফস্টাইল ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭:২৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

আপনি কী অতি সংবেদনশীল? মিলিয়ে নিয়ে ঠিক করুন করণীয়


songbedon-shil-Web
আমরা সবাই কমবেশি সংবেদনশীল। সংবেদনশীলতা মানুষের এক সুন্দর গুণ— এটি আমাদের অন্যের কষ্ট বুঝতে সাহায্য করে, সম্পর্ককে গভীর করে এবং মানবিক করে তোলে। কিন্তু যখন এই সংবেদনশীলতা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন তা হয়ে দাঁড়ায় মানসিক চাপ ও কষ্টের কারণ। অতিরিক্ত সংবেদনশীল মানুষরা সাধারণ বিষয়কেও ব্যক্তিগতভাবে নেয়, ছোটখাটো কথাতেই ভেঙে পড়েন, এবং অযথা দুশ্চিন্তায় ভোগেন।

নিচে আলোচনা করা হলো অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার ১০টি ক্ষতিকর দিক এবং পাশাপাশি করণীয়— যা অনুসরণ করলে সংবেদনশীলতাকে স্বাস্থ্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
অতিরিক্ত সংবেদনশীল মানুষরা প্রায়ই অন্যের মন্তব্য বা সমালোচনাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেন। ফলে ছোট একটি কথা বা ঠাট্টা তাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়। ধীরে ধীরে নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।

করণীয়: সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ না ভেবে শেখার সুযোগ হিসেবে নিন। নিজেকে বারবার মনে করান— সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি
সংবেদনশীল মানুষরা নানা বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভাবেন। কে কী বলল, কে কেমন আচরণ করল— এসব নিয়ে তাদের মাথায় ঘুরপাক খায় অজস্র চিন্তা। এর ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

করণীয়: প্রতিদিন কিছু সময় মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন বা প্রার্থনায় দিন। এতে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যাবে।

লেখাটি অডিওতে শুনতে ক্লিক করুন এখানে

সম্পর্কের টানাপোড়েন
অতিরিক্ত সংবেদনশীল মানুষরা প্রিয়জনের সামান্য কথাতেও আহত হন। এতে অযথা ঝগড়া বা অভিমান তৈরি হয়। সম্পর্ক অকারণে জটিল হয়ে পড়ে।

করণীয়: আবেগে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে প্রথমে ভেবে নিন, অপরজন আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিল। খোলাখুলি কথা বলা অনেক সমস্যার সমাধান করে।

সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষমতা
অতিরিক্ত সংবেদনশীলরা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত হন। যদি ভুল হয়? যদি কেউ কষ্ট পায়?—এসব ভেবে তারা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন বা এড়িয়ে যান।

করণীয়: ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে অভ্যাস করুন। ভুল হলেও অভিজ্ঞতা হিসেবে নিন। ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা তৈরি হবে।

সহজেই হতাশ হয়ে পড়া
অতিরিক্ত সংবেদনশীল মানুষরা প্রত্যাশা পূরণ না হলে দ্রুত ভেঙে পড়েন। সামান্য ব্যর্থতাকেও তারা বিশাল পরাজয় মনে করেন।

করণীয়: মনে রাখবেন, ব্যর্থতা মানেই শেষ নয়। প্রতিটি ব্যর্থতা সফলতার পথে একটি ধাপ। নিজের অর্জনগুলোকে গুরুত্ব দিন।

আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠা
সবকিছুকে নিজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা বা সব আচরণকেই নিজের প্রতি ইঙ্গিত মনে করা সংবেদনশীল মানুষের সাধারণ প্রবণতা। এতে তারা অজান্তেই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন।

করণীয়: নিজেকে জিজ্ঞেস করুন— “এই ঘটনাটি আসলেই আমার সঙ্গে সম্পর্কিত কি?” সবসময় বিষয়গুলোকে নিরপেক্ষভাবে দেখার চেষ্টা করুন।

কর্মক্ষেত্রে সমস্যায় পড়া
অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা কর্মক্ষেত্রে বড় বাঁধা হতে পারে। সহকর্মীর সামান্য সমালোচনা বা বসের নির্দেশকেও ব্যক্তিগত অপমান মনে করে কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলা সাধারণ বিষয়।

করণীয়: পেশাগত জীবনকে ব্যক্তিগত আবেগ থেকে আলাদা করুন। অফিসের সমালোচনাকে উন্নতির অংশ হিসেবে নিন।

নেতিবাচক চিন্তার আধিক্য
সংবেদনশীল মানুষরা সবকিছু নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার অভ্যাস গড়ে তোলেন। এতে তারা নিজেই নিজের শত্রুতে পরিণত হন।

করণীয়: প্রতিদিনের ছোট ছোট ইতিবাচক ঘটনাগুলো নোট করুন। যেমন—আজ কেউ হাসিমুখে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, আপনি একটি কাজ শেষ করেছেন ইত্যাদি। এতে মন ধীরে ধীরে ইতিবাচক হবে।

শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি
মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা শুধু মনকেই নয়, শরীরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা থেকে ঘুমের সমস্যা, মাথাব্যথা, হজমের গোলমাল পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

করণীয়: সঠিক ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন। সুস্থ শরীর মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

জীবনের আনন্দ হারানো
সবকিছুতে আঘাত পাওয়া বা ভেঙে পড়া মানুষকে ধীরে ধীরে আনন্দহীন করে তোলে। তারা জীবনের রঙিন মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে ভুলে যান।

করণীয়: নিজের পছন্দের কাজের জন্য সময় বের করুন—হোক তা গান শোনা, বই পড়া বা ভ্রমণ। আনন্দময় মুহূর্তগুলো মনকে ভারসাম্য দেয়।

অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা এড়ানোর কিছু সাধারণ টিপস
উপরের দিকগুলো ছাড়াও কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চললে সংবেদনশীলতা স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রাখা যায়—

নিজেকে সময় দিন: সবসময় অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে না ভেবে নিজের আগ্রহের দিকে মনোযোগ দিন।
ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন: প্রতিদিনের অনুভূতি লিখে রাখলে আবেগকে বোঝা সহজ হয়।
সীমা নির্ধারণ করুন: কারও নেতিবাচক আচরণ যদি আপনাকে আঘাত করে, তাহলে স্পষ্টভাবে সীমা টেনে দিন।
পেশাদার সাহায্য নিন: যদি সংবেদনশীলতা জীবনে বড় প্রভাব ফেলে, তাহলে কাউন্সেলিং বা থেরাপির সাহায্য নিন।

শেষ কথা
সংবেদনশীলতা মানুষের এক মূল্যবান বৈশিষ্ট্য। এটি আমাদেরকে মানবিক করে তোলে। কিন্তু যেকোনো কিছুর মতোই অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা ক্ষতিকর। তাই প্রয়োজন ভারসাম্য রাখা—যাতে আমরা আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কিন্তু আবেগ আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে।