
বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব পাওয়া যায় যেসব দেশের
অনেকেই স্বপ্ন দেখেন বিদেশে স্থায়ী হওয়ার—উচ্চশিক্ষা, চাকরি কিংবা বিনিয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে তা সবসময় সহজ নয়। তবে বিশ্বে এমন কিছু দেশ আছে, যেখানে কেবল নাগরিককে বিয়ে করলেই উন্মুক্ত হয় নাগরিকত্বের বৈধ দরজা। প্রেমের সম্পর্কে হোক কিংবা দাম্পত্য জীবনের বন্ধনে—বিয়ের বৈধতা প্রমাণ করতে পারলেই মিলতে পারে নতুন পাসপোর্ট ও স্থায়ী বসবাসের সুবিধা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন দেশে বিয়ের মাধ্যমেই পাওয়া যায় নাগরিকত্ব।
ব্রাজিল: বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উদার দেশগুলোর একটি ব্রাজিল। ব্রাজিলিয়ান নাগরিককে বিয়ে করে তার সঙ্গে টানা এক বছর দেশে বসবাস করলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা—ব্রাজিল দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃতি দেয়, অর্থাৎ ব্রাজিলের নাগরিক হতে গেলে আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে না।
স্পেন: দক্ষিণ ইউরোপের বৃহৎ দেশ স্পেনও বিয়ের মাধ্যমে দ্রুত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ দেয়। স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ে করে মাত্র এক বছর একসঙ্গে বসবাস করলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা সম্ভব। শর্ত হিসেবে প্রয়োজন—স্প্যানিশ ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান, সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা, বিয়ের বৈধ সনদ এবং একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণ।
ফ্রান্স: ফ্রান্সের নাগরিক হতে হলে কোনো ফরাসি নাগরিককে বিয়ে করে কমপক্ষে চার বছর তার সঙ্গে ফ্রান্সেই থাকতে হবে। ফ্রান্সের বাইরে বিয়ে হলে সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। একবার নাগরিক হলে পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাস ও কাজের সুবিধা পাওয়া যায়।
সার্বিয়া: সার্বিয়ার নাগরিককে বিয়ে করলে তিন বছর বৈবাহিক সম্পর্ক এবং দেশে স্থায়ী বসবাসের শর্ত পূরণ করলেই নাগরিকত্ব মেলে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না, তাই প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ। জীবনযাপন ব্যয়ও কম।
পর্তুগাল: পর্তুগিজ নাগরিককে বিয়ে করে তিন বছরের বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক থাকলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। বিশেষ বিষয়—এক্ষেত্রে পর্তুগালে থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে পর্তুগিজ ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে ধারণা থাকলে প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয়।
পোল্যান্ড: পোল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেতে চাইলে বিয়ের তিন বছর পরে এবং দেশে টানা দুই বছর বসবাসের প্রমাণ দেখাতে হবে। সঙ্গে পোলিশ ভাষায় দক্ষতার পরীক্ষাও পাস করতে হয়। এখানে জীবনযাপন সুন্দর হলেও আয়করের হার ১৮–৩২ শতাংশ হওয়ায় ব্যয় কিছুটা বেশি।
তুরস্ক: বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় দেশ তুরস্কে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া বেশ সহজ। তুর্কি নাগরিককে বিয়ে করে তিন বছর একসঙ্গে থাকা–ই যথেষ্ট। ভাষা বা সংস্কৃতি জানার বাধ্যবাধকতা নেই। তুর্কি পাসপোর্টে ১১০টিরও বেশি দেশে ভিসা ফ্রি বা অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পাওয়া যায়।
কেপ ভার্ড: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্ডে বিয়েই নাগরিকত্বের পথ খুলে দেয়। বৈধভাবে কেপ ভার্ডের নাগরিককে বিয়ে করলেই সাথে সাথেই নাগরিকত্ব আবেদন করা যায়—প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ ও দ্রুত সম্পন্ন হয়।
সুইজারল্যান্ড: কঠোর অভিবাসন নীতির দেশ হলেও সুইস নাগরিককে বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। তিন বছর বৈবাহিক সম্পর্ক এবং সুইজারল্যান্ডে পাঁচ বছর বসবাস—এ দুই শর্ত পূরণ করলেই আবেদন করা যায়। দেশের বাইরে থাকলে ছয় বছর বিবাহিত জীবনের পর আবেদন করা যায়। পুরো প্রক্রিয়াই তুলনামূলক দ্রুত।
বিয়ের আগে যা জানা জরুরি: বিয়ে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যদি সত্যিকারের ভালোবাসার টানে কেউ বিদেশি সঙ্গীকে বেছে নেন, আর সেই সম্পর্ক নাগরিকত্বের সুবিধা এনে দেয়, তবে সেটা হতে পারে এক দারুণ সুযোগ। তবে শুধুমাত্র পাসপোর্ট পাওয়ার উদ্দেশ্যে সম্পর্ক তৈরি করলে তা হয়ে যায় কাগুজে সম্পর্ক। মানসিক শান্তি এবং সত্যিকারের দাম্পত্য জীবনের সুখ তখন পাওয়া যায় না।
সূত্র: নোম্যাড ক্যাপিটালিস্ট ও গ্লোবাল সিটিজেন সলিউশনস






























