
ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে প্রায় ১২ শতাধিক ঘরবাড়ি
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে পাঁচটি ইউনিয়ন। অল্প সময়ের এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১২ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। ঝড়ে উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিজমির ফসলও।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সকালে হঠাৎ শুরু হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকেই কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়, তারপরই শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। প্রচণ্ড বাতাসে টিনশেড ও আধাপাকা ঘর উড়ে যায়, বহু গাছ উপড়ে পড়ে। অল্প সময়ের এই ঝড়ে গঙ্গাচড়া, নোহালী, কোলকন্দ, লক্ষীটারি ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের বহু গ্রাম বিধ্বস্ত হয়।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের কুতুব হাজীরহাট এলাকার নাজমুল আমিন (৩৫) বলেন, “হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে আমার পাকা ঘর ভেঙে গেছে। ঘরের টিন উড়ে অনেক দূরে চলে গেছে। আমার ছেলে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাফির মাথা ফেটে গেছে ও পা ভেঙেছে। তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪০০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান চয়ন বলেন, “আমাদের ইউনিয়নে অন্তত ৩০০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম জানান, ঝড়ে উঠতি আমন ধান ন্যুইয়ে পড়েছে, এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “গঙ্গাচড়ায় ঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতির খবর পেয়েছি, তবে ওই এলাকায় কোনো আবহাওয়া স্টেশন না থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক গতিবেগ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।”
ঘূর্ণিঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ। বহু পরিবার আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। ভেঙে পড়া ঘর, উড়ে যাওয়া টিন, নষ্ট আসবাবপত্র—সব মিলিয়ে এলাকাজুড়ে এখন ধ্বংসস্তূপের চিত্র। কৃষকরা চিন্তিত ক্ষেতে নুয়ে পড়া ধান ও ফসল নিয়ে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং জেলা প্রশাসনের দ্রুত সহায়তা ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।
গঙ্গাচড়া ইউএনও মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১২ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে জেলা প্রশাসনের কাছে চাল, টিন ও নগদ অর্থের আবেদন জানানো হবে।”




























