শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক দেশজুড়ে ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন
শেয়ার

প্রবাসের স্বপ্ন ভেঙে হুইলচেয়ারে বন্দি নওগাঁর সাদ্দাম


saddam

সাদ্দাম হোসেনের

পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন ছিল নওগাঁর তরুণ সাদ্দাম হোসেনের। প্রবাসে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন—এই আশায় তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু সেই স্বপ্নই এখন তার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। একটি দুর্ঘটনায় কোমর থেকে নিচের অংশ অবশ হয়ে গেছে তার; প্রায় ১২ বছর ধরে হুইলচেয়ারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

সাদ্দামের বাড়ি মান্দা উপজেলার কাশোঁপাড়া ইউনিয়নের কুলিহার খাঁ পাড়া গ্রামে। বাবা মো. ছাত্তার খান অসুস্থ ও অসচ্ছল মানুষ। দুই ভাই-বোন নিয়ে এখন তাদের জীবন চলছে চরম কষ্টে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হুইলচেয়ারই এখন সাদ্দামের একমাত্র ভরসা। কথা বলতে পারলেও শারীরিক যন্ত্রণায় দিন কাটে তার। টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করতে না পারায় দিন দিন অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে।

২০১৩ সালে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির আশায় সৌদি আরব যান সাদ্দাম। সেখানে এক সৌদি নাগরিকের উটের খামারে কাজ করতেন। একদিন কফিলের আত্মীয় মজা করতে গিয়ে তার গলায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলেন, “গুলিটা করব?” সাদ্দাম ভেবেছিলেন, এটি খেলনা বন্দুক। মজা করে উত্তর দেন, “করো।” কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই ট্রিগারে চাপ, আর গুলিটি লাগে তার গলায়।

সৌদি আরবে ছয় মাস চিকিৎসা চলে তার। প্রাণে বেঁচে গেলেও কোমর থেকে নিচের অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাদ্দাম বলেন, “বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাতাম, এখন নিজের চিকিৎসার জন্যই কেউ পাশে নেই। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার খরচ, কিন্তু সরকার থেকে পাই মাত্র ৮৫০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা। বাবার পক্ষে চিকিৎসা চালানো সম্ভব নয়। যদি সরকার বা কোনো সহৃদয় মানুষ সাহায্য করতেন, হয়তো আবার চিকিৎসা নিতে পারতাম।”

তার বাবা ছাত্তার খান বলেন, “ছেলের স্বপ্ন ছিল বিদেশে কাজ করে পরিবারটাকে স্বচ্ছল করা। কিন্তু দুর্ঘটনাটা আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। আমিও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সংসার চালানো আর চিকিৎসা—দুটোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

প্রতিবেশীরা জানান, সাদ্দাম ছিলেন ভদ্র ও পরিশ্রমী যুবক। পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য প্রবাসে গিয়েছিলেন, কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার জীবন ও পরিবার দুটোকেই অন্ধকারে ডুবিয়েছে।

এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, “আমাদের বার্ষিক ফান্ড থেকে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সাদ্দাম যদি ইউএনও বরাবর আবেদন করেন, যাচাই-বাছাই শেষে তাকে সাহায্যের আওতায় আনা সম্ভব।”

একজন পরিশ্রমী প্রবাসীর জীবন আজ হুইলচেয়ারে থেমে গেছে। সহায়তা পেলে হয়তো আবারও একটু আলো ফিরতে পারে সাদ্দাম ও তার পরিবারের জীবনে।