রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
এস এম সুমন খেলা ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ৬:১৬ অপরাহ্ন
শেয়ার

দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা

শুভ জন্মদিন, জাদুকর


Maradona-Card-Cover

দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা— নামটি উচ্চারণ করলেই যেন হৃদয়ে এক অন্যরকম আলো জ্বলে ওঠে। আমার মতো অনেকেরই ফুটবল নামের ভালোবাসার প্রথম অধ্যায় শুরু হয়েছিলো তার মাধ্যমেই, ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপ থেকে। ছোটবেলায় সাদা-কালো টেলিভিশনের পর্দায় প্রথম যখন ম্যারাডোনাকে দেখেছিলাম, তখনও জানতাম না একজন মানুষ কেবল পা দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়েও ফুটবল খেলতে পারে।

বিশ্বকাপের আগে বিটিভিতে প্রচারিত ১৯৮৬ সালের হাইলাইটসগুলো যেন এক জাদুর দুনিয়া খুলে দিয়েছিল। আর্জেন্টিনা বনাম ইংল্যান্ড— সেই ম্যাচে তার ‘হ্যান্ড অব গড’ ও ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ দেখে মনে হয়েছিল, ঈশ্বর নিজেই যেন মাঠে নেমেছেন ফুটবল খেলতে। তারপর থেকে ম্যারাডোনা হয়ে উঠলেন আমার জীবনের প্রথম নায়ক, প্রথম প্রেরণা, প্রথম ভালোবাসা।

স্কুলজীবনে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ম্যারাডোনার ভিউকার্ড কিনতাম। কতগুলো যে ছিল, আজ মনে নেই— কিন্তু শতাধিক ছিল নিশ্চয়ই। ১৯৯০ সালের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের পর যখন টেলিভিশনের পর্দায় ম্যারাডোনাকে কাঁদতে দেখেছিলাম, আমারও চোখ ভিজে উঠেছিল। তখন বুঝেছিলাম— এই মানুষটি শুধু এক ফুটবলার নন, এক জীবন্ত আবেগের নাম।

নাপোলির মতো একটি শহরকে তিনি একাই বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে তুলে এনেছিলেন। তার পায়ের স্পর্শে এক সাধারণ ক্লাব পরিণত হয় কিংবদন্তিতে। আর ১৯৯৪ সালে যখন নিষিদ্ধ ওষুধের দায়ে তাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হলো— মনে হয়েছিল, পৃথিবীটা হঠাৎ করেই অন্ধকার হয়ে গেছে।

বছর ঘোরে, বছর যায়, তবু ম্যারাডোনা যেন থেকে যান প্রতিটি বিশ্বকাপের গ্যালারিতে, প্রতিটি আর্জেন্টিনার জার্সিতে, প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে সাংবাদিক হিসেবে মাঠে থাকার সময় হঠাৎই যখন গ্যালারিতে তাকে দেখতে পেলাম— মনে হলো সময় থেমে গেছে। মেসি, রোনালদো, নেইমার— সবাইকে দেখেছি, কিন্তু ম্যারাডোনাকে দেখা যেন ইতিহাসকে চোখে দেখা।

সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছিল, মেসি মিস করেছিলেন পেনাল্টি, আর গ্যালারিতে বসে ম্যারাডোনার ক্ষুব্ধ মুখভঙ্গি আজও চোখে ভাসে। কে জানত, এটাই হবে বিশ্বকাপ গ্যালারিতে তার শেষ উপস্থিতি!

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর, পৃথিবী হারায় তার প্রিয়তম শিল্পীকে— আর স্বর্গ পায় তার নতুন ড্রিবলার। বিশ্বাস করি, স্বর্গের সবুজ ঘাসে এখনও তিনি বল গড়িয়ে বেড়ান, ঈশ্বরের সঙ্গে ‘ওয়ান-টু পাস’ খেলেন, হাসেন তার চিরচেনা হাসি নিয়ে।

শুভ জন্মদিন, দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।
তুমি চলে গিয়েও থেকে গেছো প্রতিটি নীল-সাদা জার্সিতে, প্রত্যেক আর্জেন্টাইনের হৃদয়ের স্পন্দনে, আর প্রত্যেক ফুটবলপ্রেমীর নীরব প্রার্থনায়।
তোমার আত্মা শান্তিতে থাকুক, ফুটবলের ঈশ্বর।
তুমি চিরকাল আমাদের নক্ষত্র।

এস এম সুমন: সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক।