
চীনের তৈরি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান হলো এফ-৭ সিরিজের সর্বাধুনিক সংস্করণ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিগ-২১ মডেলের ভিত্তিতে উন্নয়নকৃত এ যুদ্ধবিমানটি চীনে ‘চেংদু জে-৭’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে দীর্ঘদিন ধরেই এফ-৭ সিরিজের যুদ্ধবিমান যুক্ত রয়েছে, যা প্রশিক্ষণ, টহল, আকাশে যুদ্ধ এবং ভূমিতে আক্রমণ—সব ধরনের অভিযানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
একটি এক-ইঞ্জিনবিশিষ্ট, হালকা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ফাইটার জেট হিসেবে পরিচিত এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিশ্বের বহু দেশের বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের (পিএফএএএফ) চাহিদা মেটাতে এ যুদ্ধবিমানের উন্নয়ন শুরু হয়।
চীনের চেংদু এবং গুইঝো এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ১৯৬৫ সাল থেকে এই সিরিজের বিমান তৈরি করে আসছিল। বাংলাদেশকে বিমান সরবরাহের পর ২০১৩ সালেই সিরিজটির উৎপাদন বন্ধ করা হয়। মোট তৈরি হয়েছে প্রায় ২৪ শতাধিক বিমান।
২০১৩ সালে এফ-৭ যুদ্ধবিমান তৈরির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশরসহ বেশ কয়েকটি দেশ আজও এই সিরিজের বিমান ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য বিশেষভাবে উন্নত সংস্করণ হিসেবে তৈরি করা হয় এফ-৭ বিজিআই, যা ছিল জে-৭ সিরিজের শেষ উৎপাদিত মডেল। এর শেষ ইউনিটটি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়।
এফ-৭ বিজিআই মূলত আকাশ থেকে আকাশে লড়াইয়ের জন্য ব্যবহৃত হলেও এটি মাটির কাছাকাছি ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট অভিযানে ব্যবহারেরও সক্ষমতা রাখে। স্বল্পপাল্লার ইনফ্রারেড নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এই বিমানটি।
এই সংস্করণটিকে সাময়িক সমাধান হিসেবে বাংলাদেশের বহরে যুক্ত করা হয়, যতদিন না আরও আধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করা যায়।
এফ-৭ বিজিআই একটি অল-ওয়েদার ইন্টারসেপ্টর যুদ্ধবিমান—যা যেকোনো আবহাওয়ায় অভিযানে সক্ষম। এর ডেল্টা আকৃতির পাখা উচ্চতা ও গতি বাড়াতে সহায়তা করে। এটি শব্দের গতির চেয়েও বেশি গতিতে উড়তে পারে, যদিও সীমিত রেঞ্জের কারণে প্রধানত সীমিত এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক মিশনে ব্যবহৃত হয়।
পুরনো মডেলগুলোর তুলনায় এফ-৭ বিজিআই-এর ককপিটে এসেছে উল্লেখযোগ্য আধুনিকায়ন। এর মধ্যে রয়েছে: দুটি মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে (MFD), এইচওটিএএস (Hands On Throttle And Stick) প্রযুক্তি, আধুনিক এইচইউডি (Head-Up Display), হেলমেট-মাউন্টেড সাইট (এইচএমএস) ও নাইট ভিশন সিস্টেম, মুভিং ম্যাপ জিপিএস ও উন্নত ন্যাভিগেশন-বোম্বিং সিস্টেম।

এছাড়া এই যুদ্ধবিমানে পাইলটের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় মার্টিন বেকার এমকে.১০ ইজেকশন সিট, যা জরুরি মুহূর্তে দ্রুত নিরাপদভাবে পাইলটকে যুদ্ধবিমানের বাইরে নিয়ে যেতে সহায়তা করে।
যদিও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এটি তুলনামূলকভাবে পুরনো, তবুও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সীমিত প্রতিরক্ষা মিশনে এফ-৭ বিজিআই দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটিও ছিল এই সিরিজেরই একটি সদস্য।





























