
বিশ্ব ফুটবলের প্রতিভা সন্ধানের বার্ষিক আয়োজন এনএক্সজিএন তালিকা আবারও প্রকাশিত হলো ২০২৫ সালে। প্রতি বছরের মতোই এবারও বিশ্বের সেরা কিশোর ফুটবল প্রতিভাদের তালিকা প্রকাশ করেছে গোল, যেখানে পুরুষ ও নারী ফুটবলে ১ জানুয়ারি ২০০৬ বা তার পরে জন্ম নেওয়া অসাধারণ ৫০ খেলোয়াড় স্থান পেয়েছেন।
আগের বছরগুলিতে এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি পেয়েছেন জুড বেলিংহাম, রদ্রিগো, জাডন স্যাঞ্চো ও লেনা ওবারডর্ফ–এবারও সেই ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মের সেরা প্রতিভাদের মুকুট পরানো হবে।
এবারের পুরুষদের তালিকায় জায়গা পেয়েছে পাঁচটি প্রধান ফুটবল মহাদেশের প্রতিভা, যা ২৩টি ভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এর মধ্যে রয়েছেন ইতিমধ্যেই জাতীয় দলের হয়ে খেলা অভিজ্ঞ তরুণরা, শিরোপা জেতা খেলোয়াড় এবং এমন নাম যারা আগামী কয়েক দশক বিশ্ব ফুটবলের বড় মঞ্চ মাতাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গোল জানিয়েছে, এই তালিকার প্রতিটি খেলোয়াড়ই ভবিষ্যতে ফুটবলের দুনিয়ায় অমলিন ছাপ রাখবেন। বাংলা টেলিগ্রাফের পাঠকদের জন্য তালিকা থেকে শীর্ষ ১০ কিশোর ফুটবল প্রতিভার পরিচয় তুলে ধরা হলো।
১০. ফ্রান্সেস্কো কামার্ডা (এসি মিলান)
বেশিরভাগ স্ট্রাইকারের জন্য প্রতি দুই ম্যাচে একবার গোল করাও ভালো পারফরম্যান্স বলে ধরা হয়, আর সে ধরনের খেলোয়াড়কে নিয়েই সাধারণত দল আক্রমণভাগ সাজায়। কল্পনা করুন, যদি আপনার কাছে এমন এক নাম্বার ৯ থাকে, যে ম্যাচপ্রতি গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচটি গোল করে! ঠিক এই গতিতেই এসি মিলানের একাডেমি পেরিয়ে উপরের বয়সের দলের বিপক্ষেও খেলেছেন ফ্রান্সেস্কো কামার্ডা, এবং খুব দ্রুতই নিজেকে বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর কিশোর গোলদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
যদিও এখনো প্রথম দলে নিয়মিত গোল পাওয়া শুরু হয়নি, তবুও সান সিরোতে সুযোগ পেলে তিনি স্কুলজীবনের সেই প্রতিভা আবারও দেখাবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। শুধু মিলানের সমর্থকরাই নয়, ইতালির পুরো ফুটবল বিশ্বই কামার্ডাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত, কারণ ২০২৪ অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোতে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পর তাকে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ মূল স্ট্রাইকার হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৯. জোরেল হাতো (আয়াক্স)
মাত্র ১৯ বছর বয়স হলেও জোরেল হাতো ইতোমধ্যেই ১০০টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছেন আয়াক্সের হয়ে এবং এমনকি দলটির অধিনায়কও হয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের ইউরো ২০২৪ সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া দলে জায়গা করে নেওয়া এই ডিফেন্ডার বয়সের তুলনায় অত্যন্ত পরিণত খেলা খেলেন। তিনি রক্ষণভাগে সব পজিশনে খেলতে পারেন, তবে এই মৌসুমে বাম-ডিফেন্ডার হিসেবে বেশি খেলছেন। পায়ের কাজ, পাসিং এবং শারীরিক লড়াই, সব মিলিয়ে তিনি ভবিষ্যতের বিশ্বমানের সেন্টার-ব্যাক হওয়ার মতো সব গুণই রাখেন। আর্সেনাল ও লিভারপুলের মতো ক্লাব ইতোমধ্যেই তার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
৮. মাইলস লুইস-স্কেলি (আর্সেনাল)
মাইলস লুইস-স্কেলি তার প্রথম গোল করার পর এরলিং হালান্ডের বিখ্যাত ‘জেন’ সেলিব্রেশন নকল করে ফুটবল বিশ্বে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। ১৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় প্রাকৃতিকভাবে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হলেও আর্সেনালের হয়ে বাম-ডিফেন্ডার পজিশনে দুর্দান্ত খেলছেন এবং ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ডাকও পেয়েছেন।
৭. ক্লদিও একেভেরি (ম্যানচেস্টার সিটি)
‘এল দিয়াব্লিতো’ (ছোট্ট শয়তান) নামে পরিচিত এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে বার্সেলোনা ও পিএসজি-কে হারিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি দলে ভিড়িয়েছে। তিনি ড্রিবলিং, পাসিং ও বহুমুখী আক্রমণভূমিকার জন্য লিওনেল মেসির সঙ্গে তুলনা পাচ্ছেন।
৬. ইথান নওয়ানেরি (আর্সেনাল)
প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে (১৫) অভিষেক করা খেলোয়াড় নওয়ানেরি এখন আর্সেনালের প্রথম দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, বিশেষত বুকায়ো সাকার ইনজুরির সময়ে। দুই পায়ে খেলার দক্ষতা ও দূরপাল্লার শটে পারদর্শী তিনি ভবিষ্যতের বড় তারকা হওয়ার সম্ভাবনা রাখেন।
৫. এন্ড্রিক (রিয়াল মাদ্রিদ)
‘পরবর্তী পেলে’ উপাধি পাওয়া এন্ড্রিককে রিয়াল মাদ্রিদ ৬০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে নিয়েছে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ব্রাজিল জাতীয় দলে গোল করেছেন এবং লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক ম্যাচেই গোল পেয়েছেন।
৪. ওয়ারেন জায়ার-এমেরি (প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন)
পিএসজির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক করা জায়ার-এমেরি এখনো ১৯ বছরে পৌঁছালেও ১০০-র বেশি ম্যাচ খেলেছেন। মিডফিল্ডের বিভিন্ন ভূমিকায় তার দক্ষতা তাকে ইউরোপের শীর্ষ তরুণ খেলোয়াড়দের একজন করে তুলেছে।
৩. পাও কুবারসি (বার্সেলোনা)
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইউরোপের শীর্ষ স্ট্রাইকারদের আটকে দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন এই সেন্টার-ব্যাক। ভিক্টর ওসিমেন ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে আটকানোর কৃতিত্ব আছে তার। কার্লেস পুয়োল তাকে জেরার্ড পিকের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
২. এস্টেভাও উইলিয়ান (পালমেইরাস)
‘মেসিনিয়ো’ উপাধি পাওয়া এস্টেভাও ১৭ বছর বয়সেই ৩০টি গোল ও অ্যাসিস্ট মিলে ব্রাজিলিয়ান লিগে রেকর্ড গড়েছেন। চেলসি তাকে ২৯ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে সই করিয়েছে এবং ২০২৫-২৬ মৌসুমে ইংল্যান্ডে আসবেন।
১. লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা)
সম্ভবত ইতিহাসের সেরা কিশোর ফুটবলার লামিনে ইয়ামাল ইতোমধ্যেই বার্সেলোনা ও স্পেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন হয়ে উঠেছেন। ইউরো ২০২৪-এ সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা এই ফরোয়ার্ড রেকর্ড ভাঙার পাশাপাশি ব্যালন ডি’অরের দাবিদার হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছেন। তিনি প্রথম খেলোয়াড় যিনি দুইবার এনএক্সজিএন পুরস্কার জিতেছেন।
সূত্র: গোল ডট কম





























