দক্ষিণ কোরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার নয় দিন পার হলেও এখনও তাদের জ্ঞান ফেরেনি। দেশটির ওনজু শহরের একটি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন তাঁরা। চিকিৎসার ব্যয় ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় পরিবার সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা কামনা করেছে।
দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন- কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজিদ আয়মান (২০), হাসিবুল হাসান চৌধুরী (২১) এবং বুড়িচং উপজেলার শিহাব (২২)। তিনজনই কিউংডং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ওনজু শহরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজিদ ও হাসিবুল শৈশবের বন্ধু। একসঙ্গে বেড়ে উঠা, লেখাপড়ায় সব সময় পারফরম্যান্সে সমান। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় দুজনই জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বপ্নে ২০২৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমান তারা।
সেই রাতে রাজিদ ও হাসিবুল একটি বাজার থেকে বাসায় ফিরছিলেন। শিহাব তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই হিসেবে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য জোর করে মোটরসাইকেলে উঠান। কিছু দূর যাওয়ার পর গতিরোধকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনজনই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। দুর্ঘটনার নয় দিন পার হলেও এখনও জ্ঞান ফেরেনি।
তাদের বন্ধু আহমেদ শুভ বলেন, “ছোটবেলা থেকেই রাজিদ ও হাসিবুল ভদ্র, মেধাবী ও পরিশ্রমী ছিলেন। একই স্কুলে পড়ত, একই পোশাক পরত। ক্লাসে সব সময়ই ফাস্ট-সেকেন্ড হতো তারা। ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ গোল্ডেন ৫ পাওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা জানায়। দুজনই পরিবারকে না জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কোরিয়ান ভাষা শেখে। পরে পরিবার তাদের উচ্চশিক্ষায় বাধা না হয়ে সেখানে পাঠায়।”
ওনজু শহরের হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসার ব্যয় বাড়ছে। পরিবারগুলো এই ব্যয় বহন করতে পারছে না। দূরদেশে চিকিৎসার জটিলতা, অর্থনৈতিক চাপ এবং মানসিক দুশ্চিন্তায় স্বজনরা দিশেহারা। তারা সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজিদের বাবা, স্কুল শিক্ষক নান্নু মিয়া বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আমার ছেলে ও তার বন্ধু। এখনও তাদের জ্ঞান ফেরেনি। সেখানে থাকা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমি দুই ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।”
হাসিবুলের বাবা ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, “ছেলের দুর্ঘটনার খবরে তার মা সারাক্ষণ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে। জানি না ছেলে বেঁচে ফিরবে কিনা। আমার ছেলে ও তার বন্ধুর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।”





























