
নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি ।। ছবি: সংগৃহীত
ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্যপূর্ণ নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া (Curtis Sliwa) আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে তিনি নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন, যদিও রিপাবলিকান নেতাদের একাংশ তাকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো-র জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে।
কুয়োমো, যিনি গত জুনে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে হেরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি’র পিছনে অবস্থান করছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, স্লিওয়ার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলেই কেবল কুয়োমোর জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
স্লিওয়ার প্রচার উপদেষ্টা রুসাত রামগোপাল বলেন, “নিউইয়র্কবাসী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে চায় না, কিন্তু তিনি এখনো ‘না’ শব্দের মানে বুঝতে পারছেন না।” তিনি কুয়োমোর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেন যে কারণে ২০২১ সালে গভর্নর পদ থেকে তাকে পদত্যাগে করতে হয় ।
গত ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থীদের বিতর্কে স্লিওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দুই প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘জোহরান, তোমার জীবনবৃত্তান্ত এক টুকরো ককটেল ন্যাপকিনে ফিট হয়ে যাবে, আর অ্যান্ড্রু, তোমার ব্যর্থতা দিয়ে নিউইয়র্কের একটি পাবলিক স্কুলের লাইব্রেরি ভরে ফেলা যাবে।’
তবে বিতর্কের মধ্যেই স্লিওয়া সমালোচিত হয়েছেন ইসলামভীতিমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য, যেখানে তিনি মিথ্যাভাবে দাবি করেন যে মামদানি “গ্লোবাল জিহাদ” সমর্থন করেন।
কার্টিস স্লিওয়া কে?
কার্টিস স্লিওয়া মূলত পরিচিত হন ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস’ (Guardian Angels) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী অপরাধ প্রতিরোধকারী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। ১৯৭৯ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে ব্রঙ্কসের একটি ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁর নাইট ম্যানেজার থাকা অবস্থায় তিনি সংগঠনটি গড়ে তোলেন। সংগঠনটি নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে সিস্টেমে টহল দিয়ে জনপ্রিয়তা পায়।
সমর্থকদের মতে, স্লিওয়া নিউইয়র্কবাসীর ‘নিজেদের উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতীক’। তার সহযোগী রামগোপাল বলেন, ‘যখন মানুষ লাল বেরেট পরে কাউকে দেখে, তখন তারা সাবওয়ের নিরাপত্তা আর স্লিওয়ার অবদান মনে করে।’
তবে সমালোচকরা বলছেন, গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস একটি বিপজ্জনক ধরণের আত্মনিয়োগী ‘বিচার’ প্রচলন করেছে। সংগঠনটি বর্ণবাদী প্রোফাইলিং ও অভিবাসী বিরোধী মনোভাব ছড়ানোর অভিযোগেও সমালোচিত। ১৯৯২ সালে স্লিওয়া নিজেই স্বীকার করেছিলেন, সংগঠনের প্রচারের জন্য কিছু অপরাধ ‘মনগড়া’ ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রেডিও হোস্ট, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কী?
স্লিওয়ার প্রচারের মূল বিষয় জননিরাপত্তা, বিশেষ করে শহরের পরিবহন ব্যবস্থায়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধের হার কমেছে, তবু তিনি দাবি করেন—‘নিউইয়র্ক সিটি এখনো অপরাধ, বিশৃঙ্খলা ও ব্যর্থ নেতৃত্বের সংকটে ভুগছে।’
তিনি ৭,০০০ নতুন পুলিশ নিয়োগ, বিতর্কিত পুলিশ ইউনিট পুনরায় চালু করা, এবং তার ভাষায় ‘অপরাধ ঘটার আগেই সশস্ত্র অপরাধী ও পুনরাবৃত্ত অপরাধীদের টার্গেট করে আগাম পদক্ষেপ’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের নীতি অতীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অতিরিক্ত পুলিশি নজরদারি ও নাগরিক স্বাধীনতার লঙ্ঘনের কারণ হয়েছে।
এ ছাড়াও তিনি শহরের বাসস্থান খাতের সংস্কার ও প্রাণী সুরক্ষাকে তার প্রচারের অন্যতম অনুষঙ্গ করেছেন। স্লিওয়া নিজে একাধিক বিড়ালের মালিক এবং প্রাণী কল্যাণ নিয়ে সক্রিয়ভাবে কথা বলেন।
তার প্রতি সমর্থন কেন?
নিউইয়র্ক সিটির ৪.৭ মিলিয়ন নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে রিপাবলিকান মাত্র ১১ শতাংশ হলেও, স্লিওয়া সেই ভোটারদের দৃঢ় সমর্থন পাচ্ছেন।
৩০ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক শন সিংহ, যিনি আগে ডেমোক্র্যাট ছিলেন, এখন স্লিওয়ার সমর্থক। তিনি বলেন, ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলসের কাজ আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। শহরে সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলো বিপজ্জনক, আর স্লিওয়া এমন একজন মানুষ, যিনি বাস্তবতার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংযুক্ত।’
অন্যদিকে, ব্রুকলিনের ২৮ বছর বয়সী রাসেল বলেন, ‘কুয়োমো আর মামদানি—দুজনেই অপরাধ নিয়ে খুব নরম। জামিন সংস্কারের মতো নীতি অপরাধীদের উৎসাহিত করছে, কারণ এর কোনো পরিণতি নেই।’
জয়ের সম্ভাবনা কতটা?
সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, স্লিওয়ার সমর্থন মাত্র ১৪ শতাংশ ভোটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেখানে মামদানি এগিয়ে আছেন ৪৩ শতাংশে, আর কুয়োমো পেয়েছেন ৩৩ শতাংশ সমর্থন।
এ কারণেই কুয়োমো বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন, স্লিওয়া যেন তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। এমনকি তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, স্লিওয়া সরে গেলে আর তিনি জিতলে তার প্রশাসনে দায়িত্ব পাবেন।
তবে এখন পর্যন্ত স্লিওয়ার সরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। অনেক সমর্থক বলছেন, তিনি সরে গেলে তারা কুয়োমো বা মামদানির কারও পক্ষেই ভোট দেবেন না।
এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, স্লিওয়ার জয়ের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে, তবে তার উপস্থিতি নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে এখনো প্রভাব রাখছে।





























