রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৩ অপরাহ্ন
শেয়ার

অন্য দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের মার্কিন নীতি এখন অতীত: তুলসি গ্যাবার্ড


Tulsi Gabbard

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড ।। ছবি: এপি

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগের ‘অন্য দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন বা রাষ্ট্র নির্মাণ’ কৌশল এখন অতীত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে এ ধরনের নীতি আর অনুসরণ করছে না আমেরিকা।

বাহরাইনে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) আয়োজিত বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলন ‘মানামা ডায়ালগ’-এ বক্তব্য দেন তুলসি গ্যাবার্ড। তার মন্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে ট্রাম্পের আগের মধ্যপ্রাচ্য সফরে দেওয়া একই বার্তা।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিস্তারের লক্ষ্যের পরিবর্তে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায়। এর মধ্যে রয়েছে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমারু বিমান হামলার পর ইসরায়েলের সঙ্গে চলা ১২ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটানো।

গ্যাবার্ড বলেন, ‌‘শাসন পরিবর্তন বা রাষ্ট্র নির্মাণের চেষ্টায় দশকের পর দশক ধরে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এক অকার্যকর ও অবিরাম চক্রে বন্দি ছিল। এটি ছিল এক ধরনের ‘ওয়ান-সাইজ-ফিটস-অল’ পদ্ধতি—যেখানে আমরা বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা উচ্ছেদ করেছি, আমাদের শাসন কাঠামো অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছি, এমন সংঘাতে জড়িয়েছি যেগুলো আমরা পুরোপুরি বুঝতেই পারিনি—আর শেষ পর্যন্ত পেয়েছি শত্রু, হারিয়েছি মিত্র।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফলাফল হিসেবে পেয়েছি—অগণিত প্রাণহানি, ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়, আর অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়া।’

গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলে যায়, যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি করেছিলেন, যা বাইডেন প্রশাসনের সময় ২০২১ সালে বিশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাকে সমর্থন জানিয়েছেন—যিনি একসময় ইরাকে আমেরিকান বন্দিশিবিরে আটক ছিলেন এবং আল-কায়েদার সাবেক যোদ্ধা ছিলেন।

তবে গ্যাবার্ড তার বক্তব্যে ট্রাম্পের দক্ষিণ আমেরিকায় যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, ‘মাদকবাহী’ জাহাজ লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী হামলা এবং ভেনেজুয়েলাকে লক্ষ্য করে সিআইএর গোপন অভিযান পরিচালনার নির্দেশের কথা উল্লেখ করেননি—যা আক্রমণ বা শাসন পরিবর্তনের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

তবু মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সামনে গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গ্যাবার্ড স্বীকার করেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ‘এখনও নাজুক।’ তিনি আরও জানান, ইরানকে ঘিরেও উদ্বেগ রয়ে গেছে, কারণ আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান সম্প্রতি দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় নতুন কার্যক্রম শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

গ্যাবার্ড বলেন, ‘সামনের পথ সহজ নয়, তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পথে অগ্রসর হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’ গ্যাবার্ড এমন সময়ে এই বক্তব্য দিয়েছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আংশিক অচলাবস্থার (শাটডাউন) মুখে রয়েছে।