
ফাইল ছবি
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অন্তত ১৯৪ বার চুক্তি ভঙ্গ করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। রোববার (২ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনের সরকারি মিডিয়া অফিস।
সংস্থাটির পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতেহ তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জানান, এসব লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে “হলুদ রেখা” অতিক্রম করে সামরিক অনুপ্রবেশ, গুলি ও গোলাবর্ষণ, বিমান হামলা, অবকাঠামো ধ্বংস এবং চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, “চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে দখলদার বাহিনী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ১৯৪ বার এটি লঙ্ঘন করেছে। আমরা আশা করেছিলাম এই চুক্তি কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে, কিন্তু তা হয়নি।”
থাওয়াবতেহ আরও জানান, তাদের অফিস প্রতিদিন এসব লঙ্ঘনের তথ্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের কাছে পাঠাচ্ছে।
মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনী বারবার “হলুদ রেখা” অতিক্রম করে আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে, ফলে বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে থাওয়াবতেহ বলেন, “হলুদ রেখার কাছাকাছি যাওয়া বিপজ্জনক, কারণ ইসরায়েল আগেও কোনো সতর্কতা ছাড়াই সেখানকার সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।”
“হলুদ রেখা” বলতে বোঝানো হয়েছে সেই অঞ্চলকে, যেখান থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর হামলা প্রত্যাহার করেছে। এটি গাজা শহরের দক্ষিণ থেকে খান ইউনিসের উত্তর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অদৃশ্য বিভাজন রেখা।
থাওয়াবতেহ অভিযোগ করেন, ইসরায়েল এখনো পূর্ণমাত্রায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেয়নি এবং মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিংও পুনরায় খুলে দেয়নি। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে রাফাহ ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিনি অংশ দখলে রেখেছে ইসরায়েল, যেখানে ভবন ধ্বংস ও ফিলিস্তিনিদের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মিডিয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে অনুমোদিত ১৩ হাজার ২০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ২০৩টি গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে— যা মোট অনুমোদনের মাত্র ২৪ শতাংশ। এছাড়া, ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য প্রতিশ্রুত ভারী যন্ত্রপাতিও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের তথ্য উদ্ধৃত করে অফিসটি জানায়, এখনো প্রায় ৯ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ বা নিহত অবস্থায় রয়েছেন। বাস্তুচ্যুত প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার পরিবার রাস্তায় বা উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয়হীনভাবে দিন কাটাচ্ছে।
গাজা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ভূখণ্ডের প্রায় ৯০ শতাংশ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে দখলদার বাহিনী, যার আর্থিক ক্ষতি আনুমানিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
থাওয়াবতেহ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য করে।
সূত্র: আনাদোলু































