
টি-শার্ট আর জিন্স পরা এক তরুণকে চার বছর আগে নিউইয়র্ক পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সময়। সেই তরুণই এখন ইতিহাস গড়েছেন- শ্রমজীবী মানুষের ভোটে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি।
গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩৪ বছর বয়সী এই সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক প্রায় দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হিসেবে ইতিহাস গড়েন।
রেকর্ডজয় ও প্রতিদ্বন্দ্বী
ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী মামদানি পেয়েছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ১৯৬ ভোট (৫০.৪%), বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো পেয়েছেন ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৬ ভোট (৪১%) এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৩ ভোট (৭.১%)।
চ্যালেঞ্জ আর প্রতিরোধ
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের কঠোর সমালোচনার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ইহুদি লবি ও ধনকুবের সমাজ। এমনকি ইলন মাস্ক নিজের প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণায় অর্থ দেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে মামদানির বিরোধিতা করে প্রতিদ্বন্দ্বী কুওমোকে সমর্থন দেন। ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকিও দেন ট্রাম্প।
বিজয়ের ভাষণ
ব্রুকলিনে বিজয়োত্তর সমাবেশে মামদানি বলেন, “নিউইয়র্ক দেখিয়েছে- রাজনৈতিক অন্ধকারে আলো কেমন জ্বলে ওঠে। অভিবাসী, ট্রান্সজেন্ডার, কৃষ্ণাঙ্গ নারী, কিংবা একক মা- আমরা তাদের পাশে থাকব।”
তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন… ভলিউমটা একটু বাড়িয়ে নিন! নিউইয়র্ক দেখিয়েছে, আপনাকে কীভাবে হারাতে হয়।”
ভারতীয় শিকড় ও পারিবারিক প্রেরণা
জোহরান মামদানি ভারতের গুজরাটি বংশোদ্ভূত। তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি, মা মীরা নায়ার- দু’জনই প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। বিজয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আমি আজ যা হয়েছি, তা মা-বাবার কারণেই। তাদের সন্তান হতে গর্বিত।”
তাঁর সিরীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী রামা দুয়াজিও নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
নেহরু প্রসঙ্গ
বিজয়ের মঞ্চে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কথা উদ্ধৃত করে মামদানি বলেন, “ইতিহাসে এমন সময় আসে, যখন পুরোনো থেকে নতুনের পথে আমরা পা ফেলি। আজ রাতে আমরা সেই পথেই হাঁটছি।”
আন্তর্জাতিক অভিনন্দন
বিশ্বনেতা ও তারকারা অভিনন্দন জানান মামদানিকে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, “ভয়ের বিপক্ষে আশা জিতেছে।”
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অভিনন্দন জানান ডেমোক্র্যাট বিজয়ীদের। ভারত থেকে শশী থারুর, শাবানা আজমি এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিও তাঁকে শুভেচ্ছা জানায়।
প্রতিশ্রুতি ও চ্যালেঞ্জ
মামদানি নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- বিনামূল্যে শিশুসেবা, গণপরিবহন সম্প্রসারণ, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষা, ধনকুবেরদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ।
তবে এসব বাস্তবায়নে বড় বাধা হতে পারে ফেডারেল তহবিল সংকট ও গভর্নরের আপত্তি।
গাজা প্রসঙ্গের প্রতিধ্বনি
নিউইয়র্কের এই নির্বাচন শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতার জয় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। মামদানির মতে, “এ বিজয় শ্রমিকের, অভিবাসীর এবং ফিলিস্তিনিদের।”
একসময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তরুণ আজ নিউইয়র্কের মেয়র- এ শুধু রাজনৈতিক নয়, ইতিহাসেরও এক নতুন অধ্যায়।





























