
দুই দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোট গণনা হবে আগামী ১৪ নভেম্বর
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য বিহারে চলছে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ, যেখানে সাত কোটিরও বেশি ভোটার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে রাজ্যটিতে নতুন সরকার গঠনে অংশ নিচ্ছেন। ২৪৩টি আসনের বিহার বিধানসভায় দুই দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোট গণনা হবে আগামী ১৪ নভেম্বর।
এই নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, কারণ এটি আগামী কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচনের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিতর্কিত ভোটার তালিকা ও অভিযোগ
নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার সংশোধন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিরোধীদলগুলো অভিযোগ করেছে, নির্বাচন কমিশনের এ পদক্ষেপের ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন এবং এতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সুবিধা পেতে পারে। তবে বিজেপি ও ভারতের নির্বাচন কমিশন উভয়েই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নির্বাচন কমিশন গত সেপ্টেম্বর মাসে ৭ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে ৪৭ লাখ নাম বাদ দেওয়া হয়। বিরোধীদের অভিযোগ—এই তালিকা থেকে বিশেষ করে মুসলিম ভোটারদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিহার ভারতের দরিদ্রতম অথচ জনবহুল রাজ্যগুলোর একটি। এখানকার লাখ লাখ মানুষ জীবিকার সন্ধানে অন্য রাজ্যে পাড়ি জমান। রাজ্যটি সেই অল্প কিছু রাজ্যের একটি যেখানে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি এখনো এককভাবে সরকার গঠন করতে পারেনি।
বর্তমানে রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ–এর জোটে। এবারও তারা একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অপরদিকে, ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস রাজ্যের আঞ্চলিক শক্তি রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং আরও কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন লড়ছে।
এই নির্বাচনে নতুন সংযোজন হিসেবে আছেন রাজনৈতিক কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর, যিনি অতীতে বিজেপি ও কংগ্রেস—দুই দলের সঙ্গেই কাজ করেছেন। এবার তিনি নিজের দল ‘জন সুরাজ পার্টি’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দুই প্রবীণ নেতা ও উত্তরাধিকার রাজনীতি
এবারের বিহারের নির্বাচন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, কারণ এটি সম্ভবত রাজ্যের দুই প্রবীণ ও প্রভাবশালী নেতা—জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার ও আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদবের শেষ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। লালু প্রসাদ যদিও নিজে নির্বাচন লড়ছেন না তবে নীতীশ লড়ছেন। বিহারের রাজনীতিতে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দুই নেতা প্রভাবশালী ভূমিকা রেখে চলেছেন।
নীতীশ কুমার গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তিনি বর্তমানে মোদির গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির ফেডারেল সরকার গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, লালু যাদব ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তবে তার শাসনামল পরবর্তীতে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার প্রতীক হয়ে ওঠে। দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন। এবারের নির্বাচনে বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে লালুর পুত্র তেজস্বী যাদবকে সামনে আনা হয়েছে।
নারী ভোটারদের ভূমিকা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে নারী ভোটাররাই হতে পারেন গেমচেঞ্জার। রাজ্যটির প্রায় অর্ধেক ভোটার নারী এবং তাদের ভোট প্রদানের হার তুলনামূলকভাবে পুরুষদের চেয়ে বেশি। যেহেতু বিহারী পুরুষদের একটি বড় সংখ্যা অন্যান্য রাজ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাদের অনেকেই ভোট দিতে পারেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্তোষ সিং বলেন, “বিহারের নারীরা সাধারণত ইস্যুভিত্তিক ভোট দেন। তাই সব দলই এখন নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প ও আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।”
বিবিসি অবলম্বনে





























