
নিহত আবদুর রহিম এবং তাঁর ছেলে আবদুল আজিজ রিমন
ছুটির দিনের সকালটা আনন্দেই শুরু হয়েছিল আবদুর রহিমের পরিবারে। স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন আজ বিশেষ কিছু রান্না করবেন। তাই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাংস কিনতে বের হয়েছিলেন পুরান ঢাকার বাসা থেকে। কিন্তু সেই পথই হয়ে গেল তাঁদের শেষ যাত্রা। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে একই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল বাবা–ছেলের জীবন।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৪৮ মিনিট। কসাইটুলীর নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রহিম (৪৮) ও তাঁর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেলে রিমন (১২)। মাংস নেওয়ার ঠিক সেই মুহূর্তে কেপিগোজ স্ট্রিটের একটি ভবনের রেলিং ভেঙে তাঁদের ওপর আছড়ে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিথর হয়ে যায় দুইজন। গুরুতর আহত হন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলামও। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন রহিমের ভাই নাসির। ভাইয়ের লাশ দেখেই ভেঙে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিল। দুই বছর আগে হজ করেছে। আল্লাহ ওদের দুজনকে জান্নাতবাসী করুন।”
রহিমের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে। পুরান ঢাকার গার্ডেন সিটিতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন তিনি। স্ত্রী, তিন ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। বড় ছেলে মাত্র এক মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিয়েছে। ছোট ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়েই তিনি ছুটির দিনের আনন্দ শুরু করতে চেয়েছিলেন। কে জানত, সেই ছোট্ট হাতটাই বাবার হাত ধরে শেষবারের মতো বাড়ি থেকে বের হচ্ছে।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আজ সকালে রান্নার জন্য বিশেষ আয়োজন ছিল। মাংস কিনে ফিরতেই নাশতা বসানোর কথা ছিল। কিন্তু ঘরের রান্না আর হলো না—বরং অপেক্ষারত রইল মা, আর ফিরে এল দুটো নিথর দেহ।
ভূমিকম্পে ঢাকায় বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও এই একটি পরিবারে নেমে এসেছে অপূরণীয় শোক। রেলিং ভেঙে পড়ার মুহূর্তটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা এখনো সেই দৃশ্য ভুলতে পারছেন না। সবার চোখে একটাই প্রশ্ন—একটি পরিবারের আনন্দমুখর সকাল কি এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে?



























