রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক খেলা ২৫ জানুয়ারী ২০১৪, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

এবারো বিশ্বকাপের জার্সি তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে


সিউল, ২৫ জানুয়ারি ২০১৪:

আগামী জুনে ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪।
আগেরবারের মতো এবারো বিশ্বকাপের জার্সি তৈরির কাজ পেয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা। বেশ কিছু কারখানায় তৈরি হচ্ছে খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের জন্য জার্সি, শর্টস, টি-শার্ট, ট্রাউজার, পুলওভার, কার্ডিগান, ওয়েস্ট-কোট ও ক্যাপ। ইউরোপের দেশগুলো থেকেই মূলত এসব পোশাকের ক্রয়াদেশ বেশি এসেছে। পাশাপাশি ব্রাজিলের আমদানিকারকরা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জার্সি কিনেছেন বাংলাদেশ থেকে।

2_30039তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বকাপ উপলক্ষে তৈরি পোশাকপণ্য প্রস্তুত ও রফতানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কারখানার সংখ্যা প্রায় একশ। বিশ্বকাপের জার্সি তৈরির সামর্থ্য রাখে, ইপিজেডের এমন কারখানার মধ্যে আছে শান্তা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। ইপিজেডের বাইরের কারখানাগুলোর মধ্যে আছে— ফকির গ্রুপ, কেয়া কম্পোজিট লিমিটেড, এনার্জিপ্যাক ফ্যাশন লিমিটেড, ডেকো ফ্যাশন লিমিটেড, অ্যাসরোটেক্স গ্রুপ, কোস্ট টু কোস্ট গ্রুপ ও ভিয়েলাটেক্স লিমিটেড। যদিও অনেকেই বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি।

বিজিএমইএর সহসভাপতি রিয়াজ বিন মাহমুদ বলেন, ‘গত মৌসুমের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার ক্রয়াদেশ পাওয়া কারখানার নাম উল্লেখ করতে চাই না। গতবার বিভিন্ন কারখানার নাম প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতা ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিঙ্গাপুরভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান টেক্স-ইবো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের দেয়া ক্রয়াদেশের পণ্য ফেব্রুয়ারিতেই জাহাজীকরণ সম্পন্ন হওয়ার কথা। চলতি মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় আট লাখ টি-শার্টের ক্রয়াদেশ দিয়েছে। এ কাজগুলো করছে মণ্ডল গ্রুপ ও এসএম নিটওয়্যার লিমিটেড। এছাড়া ক্রয়াদেশ দিয়েছে নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার মতো স্পোর্টস ওয়্যার ব্র্যান্ডও।
২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে এ ধরনের পোশাক রফতানি করেছিল গ্রামীণ নিটওয়্যার, লিরিক, ডিভাইন, দুলাল ব্রাদার্স, রবিনটেক্স ও স্কয়ার গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের কেউই এবার ক্রয়াদেশ পায়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবি, গত মৌসুমের ধারাবাহিকতায় চলতি বছর বিশ্বকাপের ক্রয়াদেশ অনেক বেশি আসার কথা থাকলেও তা হয়নি। এর কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। গত মৌসুমে শুধু বিশ্বকাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্রয়াদেশ ছিল ৩ থেকে ৫ কোটি পোশাকের। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার সামর্থ্য ও পরিচিতির কারণেই বিশ্বকাপের মতো বড় আয়োজনকে ঘিরে ক্রয়াদেশ আসছে। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবার বিশ্বকাপের ক্রয়াদেশ কম এসেছে।

এবারের আয়োজনের লোগোসহ টি-শার্ট রফতানি করছে অ্যাসরোটেক্স। গ্রপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, অনেক বেশি ক্রয়াদেশ পাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ক্রেতারা তা বাড়াননি। গত মৌসুমে প্রায় ৩০ লাখ টি-শার্টের কাজ হলেও এবার হয়েছে এক লাখের মতো। অনেক সময় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে কাপড় তৈরি করিয়ে সেগুলো সেলাই ও ফিনিশিংয়ের কাজ করেন চীনে। লিরিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরুল আনোয়ার লিটন বলেন, এবারের আয়োজনের জন্য ক্রয়াদেশ পাওয়ার সময়টাতেই ছিল দেশজুড়ে অস্থিরতা। সে কারণেই ক্রেতারা ঝুঁকি নিতে চাননি।
২০১০ সালের বিশ্বকাপের মৌসুমে এইচঅ্যান্ডএমের জন্য প্রায় তিন লাখ পোশাক রফতানি করে ডিবিএল গ্রুপ। পুমার ক্রয়াদেশে রবিনটেক্স তৈরি করে প্রায় পাঁচ লাখ পোশাক। এছাড়া প্রায় আড়াই লাখ রফতানি করে লিরিক গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, গত বিশ্বকাপ মৌসুমে পেলেও এবার কোনো ক্রয়াদেশ পাননি তারা।

ডিভাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির হোসেইন ইমন বলেন, ‘গত বছর জানুয়ারি থেকে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্বকাপের লোগোসংবলিত পোশাকের নমুনা তৈরি করে পাঠিয়েছি। নমুনা চূড়ান্ত হওয়ার পর ক্রয়াদেশ আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আসেনি। এর মূল কারণ ছিল বছরের শেষ তিন মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খেলোয়াড়দের জার্সি তৈরি করে, এমন কারখানার সংখ্যা দেশে কম। খেলোয়াড়দের জার্সির পরিবর্তে অন্যান্য পোশাক যেমন— ট্রাউজার, পুলওভার, কার্ডিগান, ওয়েস্ট-কোট ও ক্যাপই বাংলাদেশে বেশি তৈরি হচ্ছে। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত বছরের শেষার্ধে লন্ডনে আয়োজিত এক মেলায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি কারখানা ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান। সেখানেও বেশ কিছু উদ্যোক্তা বিশ্বকাপের ক্রয়াদেশ ধরতে সমর্থ হন। সূত্রঃ বণিকবার্তা।