শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ১২ এপ্রিল ২০১৪, ১২:৫৯ অপরাহ্ন
শেয়ার

বিশ্বব্যাপী গুগলের কাছে গ্রাহক তথ্য চাওয়ার হিড়িক


সিউল, ১২ এপ্রিল ২০১৪:

শীর্ষস্থানীয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কাছে গত বছর গ্রাহক তথ্য চাওয়ার হিড়িক পড়েছিল। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন দেশ অর্ধ লক্ষাধিক গ্রাহক তথ্য প্রদানের অনুরোধ করে। গুগল সম্প্রতি তাদের আইন, নীতি ও অনলাইনে গ্রাহক তথ্য প্রবেশের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশের গ্রাহক তথ্য প্রদানের অনুরোধের বিষয়টি জানায়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

3_37565সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে গ্রাহকদের তথ্য অনেকটাই অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে। সাইবার হামলার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবাদ নিরোধের নাম করে গ্রাহক তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন তাদের বিভিন্ন গোপন নজরদারির তথ্য ফাঁস করে দেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন মিত্র দেশের গোপন নজরদারির বিশদ তথ্য উঠে আসে।

নথিগুলো প্রকাশের পর থেকেই অনলাইনে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণে সংশয়ে রয়েছেন সাধারণ গ্রাহক। স্নোডেন তার নথিতে জানান, ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের তথ্য এনএসএকে সরবরাহ করেছে। কিন্তু ফেসবুক, ইয়াহু, গুগল ও টুইটারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের দাবি অস্বীকার করে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতই স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। গুগলের সাম্প্রতিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২১ হাজার ৪৯২টি গ্রাহক তথ্য প্রদানের অনুরোধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানেই রয়েছে ভারত। দেশটি গুগলের কাছে গত বছর মোট ৫ হাজার ২০৪টি গ্রাহক তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানায়। গ্রাহক তথ্য চাওয়া শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে আরো রয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন ও পোল্যান্ড। দেশগুলো গুগলের কাছে যথাক্রমে ৪ হাজার ৯৭১, ৪ হাজার ৭৬১, ২ হাজার ৬৭১, ২ হাজার ৩২৪, ১ হাজার ৭৯৭, ১ হাজার ৪২৫, ১ হাজার ১৯২ ও ৯৯৮টি গ্রাহক তথ্য প্রদানের অনুরোধ করে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্রাহক তথ্য চাওয়ার প্রবণতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যবসাই নির্ভর করে গ্রাহক আস্থার ওপর। গ্রাহকদের আস্থা হ্রাস পেলে প্রতিষ্ঠানগুলোও যে লাভের ধারা থেকে সরে যেতে পারে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।

প্রতিবেদনে গুগল জানায়, দেশগুলোর চাহিদার ৬৫ শতাংশ তথ্য তারা সরবরাহ করেছে। মূলত আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, বিশ্বে যে কয়টি ইন্টারনেটভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার সিংহভাগই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। এ কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে গ্রাহক আস্থা হ্রাস পেলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যের পাশাপাশি গ্রাহকদের তথ্যও হাতিয়ে নিচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদি গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ করা অব্যাহত রাখে, তবে তা ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ ছাড়া আর কীইবা হতে পারে।

গ্রাহক তথ্য সরবরাহ করার নেতিবাচক ফল পাওয়া এরই মধ্যে শুরু করেছে মার্কিন ইন্টারনেটভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। চীন ও ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যাতে গ্রাহক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোই এর উত্কৃষ্ট উদাহরণ। বেশকিছু প্রতিবেদনে শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকের গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটি নিজেও এ গ্রাহক কমে যাওয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করেছে। এদিকে লাইন, ভাইবার, উইচ্যাটের মতো ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের গ্রাহক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কিন সামাজিক যোগাযোগ খাত।

বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে গ্রাহক তথ্য সংরক্ষণ করে যাচ্ছে। স্নোডেনের তথ্য অনুযায়ী, এনএসএ প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ করছে। ফলে তা গ্রাহক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু যে যুক্তরাষ্ট্রই গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ করছে তা নয়, গুগলের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারত, জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোই গ্রাহক তথ্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছে।

গত বছর স্নোডেনের নথিতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের ওপর এনএসএর নজরদারির বিষয়টি উঠে আসে। এতে মিত্র দেশ দুটির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। পরবর্তীতে জার্মানি বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি জানায়। এ বিষয়ে আইন প্রণয়নেরও দাবি জানান মার্কেল। কিন্তু সেই জার্মানিই গুগলের কাছে গ্রাহক তথ্য চাওয়ায় সংশয় প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে এত বিশদ পরিসরে নজরদারির প্রয়োজন হয় না। বর্তমান নজরদারি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে সাধারণ গ্রাহকদের আস্থা হারাতে বড় ধরনের প্রভাব রাখছে। তাই সন্ত্রাসবাদ নিরোধের পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকের তথ্যের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। সূত্রঃ বণিকবার্তা।