বর্ষাকাল মানেই কাদা, পানি আর ভেজা পরিবেশ। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে আমাদের প্রিয় জুতাজোড়াগুলো। একটু অসাবধানতা হলেই ভিজে গিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে নতুন বা পুরোনো জুতা। তবে কিছু সহজ যত্নের মাধ্যমেই জুতা রাখা যায় দীর্ঘস্থায়ী ও সুন্দর। চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে বর্ষার দিনে জুতার সঠিক যত্ন নেবেন:
👟 স্নিকারের যত্ন: বর্তমানে স্নিকার জুতা তরুণদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। তবে বর্ষায় এই জুতা পরার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা জরুরি। সম্ভব হলে বর্ষার দিনে স্নিকার না পরাই ভালো। যদি পরতেই হয় এবং রাস্তায় কাদা-পানিতে ভিজে যায়, তাহলে ভেজা অবস্থায় রাখা যাবে না। দ্রুত শুকনো কাপড় দিয়ে অতিরিক্ত পানি মুছে ফেলুন। স্নিকার সাধারণত কাপড়ের তৈরি হয়, তাই সাবান-পানিতে সহজেই ধোয়া যায়। পরিষ্কারের পর অবশ্যই ভালোভাবে রোদে বা বাতাসে শুকাতে হবে। তবে শুকিয়ে নেয়ার পর তা কখনোই বন্ধ কেবিনেটে রাখবেন না। হালকা বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখলে জুতা দুর্গন্ধমুক্ত থাকবে।
🔥 চুলার তাপে শুকানো যাবে না: জুতা কখনোই সরাসরি চুলার তাপ, গ্যাস স্টোভ কিংবা ড্রায়ার দিয়ে শুকানো উচিত নয়। এতে জুতার চামড়া বা কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং জুতার আকার বিকৃত হয়ে ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। তাই তাপে শুকানোর ভাবনা একেবারেই বাদ দিন। বরং রোদ বা ফ্যানের বাতাসে ধীরে শুকাতে দিন।
👞 প্রতিদিন একই জুতা পরা নয়: প্রতিদিন একই জোড়া জুতা না পরে একদিন পরপর ঘুরিয়ে পরা ভালো। এতে জুতার ভেতরে জমে থাকা আর্দ্রতা দূর হয় এবং জুতা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও কমে। এই অভ্যাস জুতাকে শুধু আরামদায়কই নয়, চার গুণ বেশি টেকসই করে তোলে।
🧼 চামড়ার জুতা পরিষ্কার: চামড়ার জুতা ব্যবহারের পর তা নরম সুতি কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলুন। পানি এবং সরাসরি রোদ—দুটিই লেদার জুতার জন্য ক্ষতিকর। প্রতিবার ব্যবহারের পর শুকনো নরম কাপড় দিয়ে মুছে রাখলে জুতা নতুনের মতো থাকবে।
📦 কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন: চামড়ার বা কৃত্রিম চামড়ার জুতা দীর্ঘদিন বদ্ধ জায়গায় রাখলে রং নষ্ট হতে পারে কিংবা চামড়া উঠে যেতে পারে। তাই জুতা স্টোর করার সময় হালকা বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখুন এবং জুতাগুলোকে নরম সুতি কাপড়ে মুড়িয়ে রাখুন। এতে রঙ ও চামড়ার মান ভালো থাকবে।
✨ নিয়মিত পালিশ করুন: জুতা যত বেশি পরিচ্ছন্ন থাকবে, তত বেশি দিন টিকবে। নিয়মিত ভালো মানের ক্রিম ও ব্রাশ দিয়ে জুতা পালিশ করুন। চাইলে ঘরেই করতে পারেন বা প্রয়োজনে চর্মকারের সহায়তা নিতে পারেন। ঘরে পালিশ করার সময় ব্রাশে সামান্য পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে ব্যবহার করলে জুতার রং দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং বাড়তি ঝকঝকেও আসে।
👃 দুর্গন্ধ দূর করার উপায়: বদ্ধ জুতায় অনেক সময় বাজে গন্ধ হতে পারে। প্রতিবার ব্যবহারের পর জুতার ভিতরে সামান্য খাবার সোডা ছিটিয়ে রেখে দিন এবং খোলা জায়গায় রাখুন। পরদিন তা ঝেড়ে নিন—দুর্গন্ধ থাকবে না। চাইলেই ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার বা এসেনশিয়াল অয়েল। একটি ছোট সুতি কাপড় অল্প ভিনেগারে ভিজিয়ে জুতার ভিতরটা মুছে ফেলুন। আবার কাগজের বল বানিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে জুতার মধ্যে রেখে দিলে তা দুর্গন্ধমুক্ত থাকবে এবং জুতার আকৃতি বজায় থাকবে।
🧽 জুতার দাগ দূর করার উপায়: চামড়ার জুতায় দাগ লাগলে চিন্তার কিছু নেই। এক কাপ ঠান্ডা পানিতে অল্প ভিনেগার মিশিয়ে নিন। পাতলা কাপড় সেই মিশ্রণে ডুবিয়ে দাগের ওপর আলতো করে ঘষে নিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দাগ মিলিয়ে যাবে।
🔧 লম্বা ভাঁজ দূর করুন: অনেক দিন পরলে জুতার ওপর লম্বা ভাঁজ পড়ে যায়, যা দেখতে খুব একটা ভালো লাগে না। এই সমস্যা দূর করতে ভাঁজের জায়গায় জুতার রঙের নেইল পলিশ ব্যবহার করুন। এতে ভাঁজ ঢেকে যাবে এবং জুতার সৌন্দর্য অটুট থাকবে।
👠 হিল জুতার যত্ন: হিল জুতা দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে শুরুতেই নিচে অতিরিক্ত রাবার সোল লাগিয়ে নিন। এতে ঘষা-খাওয়া কম হবে। প্রতিবার ব্যবহারের পর নরম কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে হিল ও জুতার ওপরের অংশ পরিষ্কার করুন। যদি ময়লা বেশি হয়, তবে হালকা গরম পানি ও মাইল্ড সাবান ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন—জুতা যেন বেশি ভিজে না যায়। দাওয়াত বা অনুষ্ঠানে পরার জন্য তুলে রাখা হিল জুতার মধ্যে খবরের কাগজ গুঁজে রাখলে জুতার আকৃতি ঠিক থাকবে।
বর্ষায় একটু বাড়তি যত্নেই আপনার প্রিয় জুতা থাকবে দীর্ঘস্থায়ী, আরামদায়ক ও ঝকঝকে। নিয়মিত পরিচর্যা করলে নতুন জুতাও পুরোনো হয়ে যাওয়ার আগেই নষ্ট হবে না। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন জুতার যত্ন নেওয়া!




























