
পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল ঝালে সারহাদি স্পষ্টভাষায় কথা বলেছেন নারীর স্বাধীনতা ঘিরে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং পাকিস্তানের বিনোদন জগতে আজও বিদ্যমান ‘কাস্টিং কাউচ’ সংস্কৃতি নিয়ে। সম্প্রতি আহমেদ আলী বাটের অনুষ্ঠান ‘এক্সকিউজ মি’-তে এক খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব বক্তব্য তুলে ধরেন।
আলোচনার একপর্যায়ে উপস্থাপক বাট বলেন, পাকিস্তানে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে—“নারীর উপার্জনে বরকত হয় না।” এই বক্তব্যের জবাবে সারহাদি বলেন, “আমি নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি, নিজের বিয়ের খরচ দিয়েছি, এমনকি নিজের টাকায় গাড়ি কিনেছি। আমি বুঝি না, কেন আমার উপার্জনে বরকত কম হবে পুরুষের চেয়ে?”
বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এক প্রশ্নে হেসে ঝালায় বলেন, “না, প্রস্তাবটা আমার স্বামীই দিয়েছে। আমি এমন একজন, যাকে অনেকে ভয় পায়। কী বলব! আমার ব্যক্তিত্বটাই এমন।”
তিনি স্বীকার করেন, এই ‘ভীতিকর ব্যক্তিত্ব’ হয়তো তার নিজের তৈরি করা একটি আত্মরক্ষার উপায়, কারণ পাকিস্তানি বিনোদন অঙ্গনে এখনও তরুণীদের বিভিন্ন প্রলোভন ও শোষণের শিকার হতে হয়।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “শুরুতে আমাকে কয়েকজনকে স্পষ্ট ‘শাট-আপ কল’ দিতে হয়েছিল। হ্যাঁ, আমি এ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই গিয়েছি। খুব বেশি আগ্রাসী না হলেও, আমাকে কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।”
তিনি জানান, এক পরিচালক তাকে সরাসরি বলেন, “তুমি যদি তোমার পছন্দের চরিত্রে অভিনয় করতে চাও, তাহলে তোমাকেও সেই পথে হাঁটতে হবে, যেভাবে অন্য মেয়েরা সুযোগ পায়।”

সারহাদি বলেন, “আমি পুরোপুরি ক্ষেপে যাই, যেটা স্বাভাবিক। আমি স্পষ্ট করে বলি, আমি কেবল আমার পড়াশোনার খরচ চালাতে অভিনয় করছি, এবং কেউ যদি এমন প্রস্তাব দেয়, আমি তাকে চড় মারব।”
তিনি আরও জানান, সেই পরিচালক একসময় তাকে “অনেক লম্বা” বলে বাতিল করেছিলেন, যদিও ওই পরিচালকের উচ্চতা ছিল অনেক কম। “তবুও তিনি ছিলেন পরিচালক, আর আমার উচ্চতা তার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়! হাস্যকর!”—ব্যঙ্গ করে বলেন সারহাদি।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যখন উপস্থাপক জিজ্ঞেস করেন, এই পরিচালক এখনো ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন কিনা, তখন তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, “মাশাআল্লাহ, হ্যাঁ। এ ধরনের লোকেরা তো ই থাকেই।”
ঝালে সারহাদির এই বক্তব্য পাকিস্তানের বিনোদন অঙ্গনে ক্ষমতার অপব্যবহার ও লিঙ্গ বৈষম্যের বাস্তবতা আরও একবার স্পষ্ট করে তুলেছে। ধীরে ধীরে আরও অনেক অভিনেত্রী এখন এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন।
সম্প্রতি অভিনেত্রী আলিজে শাহ-ও শোবিজের সিনিয়রদের হয়রানি, মিডিয়া বুলিং এবং টক্সিক কাজের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, অনেক সময় অভিনেতাদের প্রাপ্য সম্মানী আদায়ের জন্যও অনুনয়-বিনয় করতে হয়।
সব মিলিয়ে, সারহাদিদের মতো কণ্ঠস্বররা বিনোদন জগতে পেশাদারিত্বের চর্চা ও নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে নতুন পথ দেখাচ্ছেন।
সূত্র: ডন নিউজ





















