মঙ্গলবার । ডিসেম্বর ৯, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিনোদন ৭ অগাস্ট ২০২৫, ৫:৪৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

অন্যের বাড়ির বাসি খাবার খাওয়া মেয়েটি আজ ৩০ কোটি রুপির মালিক



চার্লি চ্যাপলিন একসময় বলেছিলেন, “জীবন যখন কাছ থেকে দেখা হয়, তখন তা ট্র্যাজেডি; দূর থেকে দেখা হলে তা কমেডি।” এই কথাটি যেন একেবারে মিলে যায় ভারতের জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পীদের জীবনের সঙ্গে। পাঞ্জাব থেকে মুম্বাই পর্যন্ত কাপিল শর্মার পথচলা সহজ ছিল না। প্রয়াত রাজু শ্রীবাস্তব মুম্বাইয়ে অটোরিকশা চালাতেন সাফল্যের মুখ দেখার আগে।

তবে তাদের সবার কাহিনীকে ছাপিয়ে গেছে একজন নারী—ভারতী সিংহ। যিনি শুধু কষ্ট থেকে উঠে আসেননি, বরং পুরুষশাসিত কমেডি দুনিয়ায় নিজের আলাদা অবস্থান তৈরি করেছেন, হয়েছেন ‘লাফটার কুইন’, এখন তিনি সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া কৌতুক অভিনেত্রীদের একজন।

দুই বছর বয়সে পিতৃহারা, ভাইবোন কাজ নেন কম্বলের কারখানায়

মাত্র দুই বছর বয়সেই বাবাকে হারান ভারতী। সংসারের পুরো দায় এসে পড়ে মায়ের কাঁধে এবং দুই বড় ভাইবোনের ওপর। এক সাক্ষাৎকারে ভারতী জানান, টিকে থাকার জন্য তার ভাইবোনদের পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল, তারা কাজ শুরু করেন কম্বল তৈরির কারখানায়। রাত জেগে ভারী কম্বল সেলাই করতেন তারা, যেসব কম্বল নিজেরা কখনো ব্যবহারও করতে পারতেন না।

মা পরিচারিকার কাজ করতেন, বেঁচে ছিলেন বাসি খাবার খেয়ে

ব্রুট ইন্ডিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতী বলেন, “শৈশবে আমরা এতটাই ক্ষুধার্ত ছিলাম যে, উৎসবগুলো এলেই মন খারাপ হয়ে যেত। মা যেসব বাড়িতে কাজ করতেন, সেখান থেকে বাসি মিষ্টির বাক্স নিয়ে এসে আমাদের লক্ষ্মীপূজা করাতে হতো। আমি অন্য শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে আতশবাজি পোড়াতাম না, শুধু দাঁড়িয়ে থাকতাম যেন মনে হয় আমিও পোড়াচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “মা অন্যের বাড়ির টয়লেট পরিষ্কার করতেন, আমি দরজার পাশে বসে থাকতাম। মালিকপক্ষ বাসি খাবার দিত, সেই খাবারই আমাদের তাজা খাবার হয়ে যেত।”

ভারতীর ভাষায়, “আমরা লবণ আর রুটিতে দিন পার করেছি। এখন অন্তত ডাল, তরকারি আর রুটি খেতে পারি। আমি চাই না আমার পরিবার আর কখনো সেই দুঃসময়ের মুখোমুখি হোক।”

কমেডি সার্কাস থেকে খ্যাতি

পাঞ্জাবে কলেজে পড়ার সময় নাটক ও কমেডির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ভারতী। তখনই তার প্রতিভা নজরে আসে। ‘কমেডি সার্কাস’-এর অডিশনে অংশ নেন অমৃতসরে। সেখান থেকে ডাক আসে মুম্বাইয়ের। তিনি বলেন, “আমি জীবনের প্রথম উড়োজাহাজে করে মায়ের সঙ্গে মুম্বাই যাই।” এরপর একের পর এক কমেডি শোতে অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা পান। তার চরিত্র ‘লালি’ হয়ে ওঠে ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ।

সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে

ভারতী শুধু কমেডির মঞ্চেই থেমে থাকেননি। ‘ঝলক দিখলা যা ৫’–এ নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে ‘ডান্স দিওয়ানে’, ‘হুনরবাজ: দেশ কি শান’, ‘সারে গা মা পা লি’ল চ্যাম্পস ২০২২’ এবং সাম্প্রতিক ‘লাফটার শেফস – আনলিমিটেড এন্টারটেইনমেন্ট’–এর মতো জনপ্রিয় শো উপস্থাপনা করেছেন।
নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ‘ভারতী টিভি’ চালান এবং স্বামী হর্ষ লিম্বাচিয়ার সঙ্গে ‘লাইফ অব লিম্বাচিয়াস’ নামের ব্লগ চ্যানেল পরিচালনা করেন। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ৯ মিলিয়ন।

পারিশ্রমিক ও সম্পদের দিক দিয়ে শীর্ষে

ই-টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, লাফটার শেফস সিজন ২-এর প্রতিটি পর্ব উপস্থাপনার জন্য ভারতী সিংহ ১০ থেকে ১২ লাখ রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন, যা তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া কমেডিয়ানদের কাতারে নিয়ে গেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ভারতীর সংগ্রহে রয়েছে অডি কিউ ৫, মার্সিডিজ-বেঞ্জ জিএল ৩৫০, বিএমডব্লিউ এক্স ৭১ গাড়ি। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি রুপি। মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৬ কোটি রুপি।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

নিউজ পাওয়া যায়নি