
রোহিঙ্গা সংকট দিনে দিনে আরও জটিল আকার ধারণ করছে। আট বছর আগে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা। আগেই অবস্থান করা রোহিঙ্গা এবং পরবর্তী সময়ে জন্মহার বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ লাখে। যদিও ওই বছরই প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়েছিল, তবে এখনো একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেনি।
রাখাইনের চলমান অস্থিতিশীলতায় রোহিঙ্গারা এখনো নিরাপদ প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে সংকট যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে আন্তর্জাতিক সহায়তা।
ইন্টার-সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার তহবিল চাওয়া হলেও, গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত সহায়তা এসেছে মাত্র ৩৩ কোটি ২ লাখ ডলার, যা চাহিদার ৩৫ শতাংশ। আগের বছরগুলোতে ৬৮ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তা মিললেও এ বছর সেই হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা-ইসরায়েল সংঘাত এবং আফ্রিকার অস্থিরতা আন্তর্জাতিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাদ্যসহ মৌলিক সেবায় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। অপুষ্টি, মাদক চোরাচালান, মানবপাচার ও অপরাধচক্রে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে এখনো নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা নেই, বরং সহিংসতা বাড়ছে এবং আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত হচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গারা ফিরতে চাইছে না।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অন্তত তিনবার আলোচনায় বসলেও প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ সফল হয়নি। চীনসহ কয়েকটি দেশ মধ্যস্থতা করলেও নিরাপদ পরিবেশ না থাকায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর সতর্ক করে বলেছে, দীর্ঘস্থায়ী এই সংকট রোহিঙ্গাদের জীবনকে আরও অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নতুন করে সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ বরাবরই বলছে, রোহিঙ্গা সংকট কেবল মানবিক ইস্যু নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা। তাদের নিজ দেশে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই একমাত্র টেকসই সমাধান।




























