
প্রতীকী ছবি
আমরা অনেক সময় বাইরের দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কিন্তু একটা কাজ করতে পারি— যেভাবে আমরা প্রতিক্রিয়া দিই, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা। ধীরে ধীরে ভেতর থেকে শক্ত হয়ে উঠতে পারি, যেন বাইরের অশান্তি আমাদের অনুমতি ছাড়া শান্তি কেড়ে নিতে না পারে।
মনই আসল যুদ্ধক্ষেত্র। এখানেই সবচেয়ে বড় লড়াই চলে। ভয় আমাদের ক্লান্ত করে, অথচ সেই ভয় বাস্তবে কখনো ঘটে না। প্রত্যাশা আমাদের ফাঁদে ফেলে, আর আমরা বারবার নিজেদেরই চিন্তার খপ্পরে পড়ি।
জীবন আসলে এক অদ্ভুত খেলা— প্রত্যেকে আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ আর সীমাবদ্ধতা পায়। প্রশ্ন হলো, আপনি সেই বাস্তবতাকে কেমনভাবে নেবেন? ঘাটতির দিকে তাকাবেন, নাকি যা আছে সেটার মধ্যেই সেরাটা বের করে আনবেন?
সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো— যখন বাইরের জগৎকে বদলাতে পারছেন না, তখন নিজের প্রতিক্রিয়া বদলান। কিন্তু এটাও সহজ না। কারণ আমাদের বেশিরভাগ চিন্তাই চলে অবচেতনভাবে। তবুও সচেতন হলে ধীরে ধীরে বদলানো যায়।
চলুন, দেখে নেই সেই তিনটি চিন্তার অভ্যাস, যেগুলো মানুষকে বারবার ভেতরের শান্তি আর আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছে…
সবকিছুর জন্য আগেভাগেই নির্দিষ্ট প্রত্যাশা করে রাখা
ধরুন, টেবিলে একটা কমলা রাখা আছে। আপনি খেতে শুরু করলেন। মাথায় আগেই একটা ধারণা আছে— পাকা কমলার স্বাদ কেমন হওয়া উচিত।
যদি সেটি প্রত্যাশার চেয়ে টক লাগে, সঙ্গে সঙ্গে হতাশ লাগবে। আবার যদি একেবারেই স্বাভাবিক হয়, তাহলে মনে হবে—“কিছুই তো বিশেষ না।” একঘেয়েমি ভর করবে।
প্রথম ক্ষেত্রে কমলা আপনাকে হতাশ করেছে, কারণ প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সেটি বিরক্ত করেছে, কারণ ঠিক যেমনটা ভেবেছিলেন, তেমনই হলো—নতুন কিছুই নেই।
ফলাফল একটাই—মনে হবে এটা ভালো না, অথবা যথেষ্ট ভালো না।
এই অভ্যাস শুধু কমলা নয়, জীবনের সব জায়গায় কাজ করে। সম্পর্ক, কাজ, মানুষ— যখনই আমরা ধরে নেই “এমনটা হতেই হবে,” তখনই বেশিরভাগ সময় হতাশ হতে হয়। কারণ কিছুই পুরোপুরি প্রত্যাশা মতো হয় না।
কিন্তু যদি প্রত্যাশা না করি? খোলামেলা কৌতূহল নিয়ে খাই? তখন প্রতিটি কমলা আলাদা অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। নতুন স্বাদ, নতুন অনুভূতি।
এটাই ধ্যানচর্চার ভাষায় “শুরুর মন” বা বিগিনার’স মাইন্ড । কিন্তু আসলে এটা হলো প্রত্যাশামুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি।
ভেতরে ভেতরে প্রতিরোধ করা
আমরা প্রায়ই টের না পেয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করি। খেয়াল করলে দেখবেন, শরীরে কোথাও না কোথাও টান আছে। কারও গলায়, কারও কাঁধে, কারও পিঠে।
এই টান কেন হয়? ভেতরে ভেতরে কিছু একটা আমরা ঠেলছি। হয়তো কারও ওপর বিরক্ত, হয়তো দায়িত্বে ক্লান্ত, হয়তো শুধু বোর হচ্ছি। এই প্রতিরোধই শরীরকে টানটান করে ফেলে, আর মনকে দুর্বল বানায়।
এ থেকে মুক্তির সহজ উপায় আছে—
• শরীরের কোথায় টান আছে খুঁজুন।
• খেয়াল করুন, কী কারণে এই প্রতিরোধ ঘটছে।
• গভীর শ্বাস নিন, একটু হাত-পা নড়ান।
• তারপর একই বিষয় বা মানুষের মুখোমুখি হোন, কিন্তু এবার শান্ত শরীর আর শান্ত মন নিয়ে।
এভাবে বারবার চেষ্টা করুন। দেখবেন, প্রতিদিনের টান কমছে, আর উপস্থিতি বাড়ছে। সংগ্রামের জায়গা থেকে প্রবাহে আসুন, প্রতিরোধ থেকে গ্রহণযোগ্যতায় আসুন।
শুধু খারাপ দিকেই চোখ রাখা
প্রায় সব পরিস্থিতিতেই কিছু না কিছু ভালো দিক থাকে, যদি আমরা দেখতে চাই।
আমরা নিজেরাই দেখেছি—প্রিয়জন হারানোর সময়ও জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করা যায়। যাদের কাছে পেয়েছি, তাদের সময়কে আরও বেশি মূল্য দেওয়া যায়।
অসুস্থ হলে সেটা বিশ্রামের সুযোগ হয়ে আসে। কাজ আটকে গেলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো যায়। সন্তান রাগ করলে বোঝা যায়, সে নিজেকে প্রকাশ করছে।
কোনো সমস্যার দিকে শুধু বিরক্তির চোখে তাকাবেন না। সেখানে সুযোগ খুঁজুন।
রাগ এলে শিক্ষা নিন। হিংসা এলে প্রশংসা করুন। দুশ্চিন্তা এলে কাজ শুরু করুন। সন্দেহ এলে বিশ্বাস রাখুন। মনে রাখুন—পরিস্থিতির চেয়ে আপনার প্রতিক্রিয়াই বেশি শক্তিশালী।
জীবনের কিছু অংশ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কিন্তু বেশিরভাগই আপনার প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। আপনি শেষ পর্যন্ত কোথায় যাবেন, সেটা ঠিক হয় এই প্রতিক্রিয়াগুলো দিয়ে।
এবার আপনার পালা
এখন আপনার পালা পুরনো অভ্যাসগুলোতে না ফেরার। শুধু এই কারণে নয় যে ওগুলো পরিচিত আর আরামদায়ক। বরং ভেবে দেখুন—আপনি কেন এগুলো ছাড়ছেন? নিজের ভালো থাকার জন্য।
কারণ সামনে এগোতে চাইলে বারবার পেছনে তাকানো চলে না।
এখন আপনার পালা নিজের শান্তি আর আনন্দ ফিরিয়ে আনার। সময়কে সত্যিই অর্থবহ করে তোলার।




























