রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

৪১ বাংলাদেশি স্বজনকে ভিসা পাইয়ে দিতে লন্ডন মেয়রের জালিয়াতি


amirul

সাবেক লন্ডন মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমিরুল ইসলাম

লন্ডনের এনফিল্ড কাউন্সিলের মেয়র, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪১ জন আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্য ভিসা আদায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ পায়।

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমিরুল ইসলাম তার পদমর্যাদা এবং কাউন্সিলের অফিসিয়াল লোগো ব্যবহার করে একাধিক ভিসা আবেদনকে “বিশেষভাবে বিবেচনা” করার জন্য ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। টেলিগ্রাফের হাতে আসা এই চিঠিগুলোতে আমিরুল ইসলাম ব্রিটিশ হাইকমিশনের কর্মীদের অনুরোধ করেন যেন তার আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ভিসা আবেদন দ্রুত ও সহজে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, কারণ তারা তার মেয়র পদে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তিনি কিছু চিঠি অফিসিয়ালভাবে পাঠালেও, নিজেই আরও কিছু চিঠি জালিয়াতি করে তৈরি ও পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন, যাতে সেগুলো সরকারি চিঠির মতো দেখায়।

২০২৪ সালের মে মাসে ঢাকায় কিছু সন্দেহজনক চিঠি পাওয়ার বিষয়ে ব্রিটিশ হোম অফিস এনফিল্ড কাউন্সিলকে অবহিত করার পর কাউন্সিল একটি ১৬০ পৃষ্ঠার গোপন তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে। এই প্রতিবেদনে উঠে আসে যে মেয়র হওয়ার আগেও আমিরুল ইসলাম এ ধরনের একাধিক চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তদন্তে দেখা যায়, মোট ১৩টি ভিসা সুপারিশপত্র মেয়রের দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছিল এবং আমিরুল নিজে আরও ৬টি চিঠি তৈরি ও পাঠানোর কথা স্বীকার করেন। বাকি ১১টি চিঠির সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে তদন্তকারীরা ধারণা করেন। অনেক চিঠিতে দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া করানোর জন্য পাসপোর্ট নম্বর ও জন্ম তারিখের মতো সংবেদনশীল তথ্যও যোগ করা হয়েছিল। যদিও তিনি ৪১ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত মাত্র একজন বাংলাদেশি অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

তদন্তকারীদের কাছে আমিরুল ইসলাম দাবি করেন অতীতে এনফিল্ডের যেসব মেয়র দায়িত্বে ছিলেন, তারাও আত্মীয়-স্বজনদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য একই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন, এবং তিনি কেবল সেই নজির অনুসরণ করেছেন। তদন্তে বলা হয়, মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের আনতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা গ্রহণযোগ্য, কিন্তু আমিরুল ইসলাম ব্যক্তিগত স্বার্থে সেই সীমা অতিক্রম করেছেন এবং তার ক্ষমতা ব্যবহার করে পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সুবিধা দিতে চেয়েছেন। এছাড়া, কিছু চিঠির তারিখ শপথ অনুষ্ঠানের প্রায় এক বছর আগের হওয়ায় সেগুলোর উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ দেখা দেয়।

আমিরুল ইসলাম ২০২৫ সালের মে মাসে মেয়র হিসেবে এক বছর পূর্ণ করেন। এই অভিযোগের পরও তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন তিনি কোনো অপরাধ করেননি। বরং তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি এজেন্সি তার সই জাল করে ভিসা প্রক্রিয়ায় সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছিল এবং তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের কাছেও অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনা প্রকাশের পর স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং এনফিল্ড কাউন্সিলের কনজারভেটিভ গ্রুপের নেতারা অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন।

অভিযোগ প্রকাশের পর ২০২৫ সালের জুনে লেবার পার্টি আমিরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। বর্তমানে তিনি স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এনফিল্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা তদন্তের ফলাফলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে এবং আমিরুলকে কিছু বিধিনিষেধ মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—আর কোনো ভিসার জন্য সুপারিশ না করা এবং আচরণবিধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ।